পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৫
মহরম পর্ব্ব—অষ্টাদশ প্রবাহ

স্বামীর প্রাণ হরণ করিল? উহার জায়গা কোথায় আছে? জগৎ কি পাপভার বহনে এতই সহনশীল হইয়াছে যে, মহাপাপে আক্রান্ত জাএদার ভারও অকাতরে সহ্য করিবে?— স্বামীঘাতিনীর স্থান কি ইহলোকে কোন স্থানে হইবে?—নরক কাহার জন্য? বোধ হয় নরকেও জাএদার ন্যায় মহাপাপিনীর স্থান নাই!”

 অনেকেই অনেক কথা বলিলেন, যাহা ঘটে নাই তাহাও রটাইলেন। জাএদা, যাহা কখনও মনে ভাবে নাই, তাহাও কেহ কেহ রটাইয়া দিলেন। হোসেন চক্ষের জল মুছিতে মুছিতে নুরনবী মোহাম্মদ মোস্তাফার রওজা মোবারকের দিকে চলিয়া গেলেন। ভ্রাতার নিকটে তিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন—বিষদাতার সন্ধান জানিলেও তাহাকে কিছুই বলিবেন না, তাহার প্রতি কোনরূপ দৌরাত্ম্যও করিবেন না! জাএদা মদিনায় নাই, থাকিলেও কিন্তু হোসেন অবশ্যই ভ্রাতৃআজ্ঞা প্রতিপালন করিতেন। এখনও তাহাই মনে করিয়া ঈশ্বরের উপাসনায় তিনি প্রবৃত্ত হইলেন।

অষ্টাদশ প্রবাহ

 এজিদ যে দিবস হাসানের মৃত্যুসংবাদ পাইয়াছেন, মনের আনন্দে সেই দিন হইতে অকাতরে ধনভাণ্ডার খুলিয়া দিয়াছেন। দিবারাত্র আমোদ-আহ্লাদ! স্বদেশজাত “মা-আল্ আনব” নামক চিত্ত-উত্তেজক মদ্য সর্ব্বদাই পান করিতেছেন। সুখের সীমা নাই! রাজপ্রাসাদে দিবারাত্র সন্তোষসূচক ‘সাদিয়ানা’ বাদ্য বাজিতেছে। পূর্ব্বেই সংবাদ আসিয়াছে, মায়মুনার সঙ্গে জাএদা দামেস্কে আসিতেছেন; আজই আসিবার সম্ভাবনা—এ চিন্তাও এজিদের মনে রহিয়াছে। স্বামীহন্তা জাএদাকে দেখিতে এজিদের বড়ই সাধ হইয়াছে। জাএদাকে তিনি অঙ্গীকৃত অর্থ দান করিবেন, আপনার প্রতিজ্ঞাটিও পালন করিবেন! মায়মুনাকে কি প্রকারে পুরস্কৃত করিবেন, নরপতি এজিদ তাহাও চিন্তা করিতেছেন। পূর্ব্বেই তিনি ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন,“আমার পরম শত্রুর মধ্যে এক জনকে মারওয়ানই কৌশল করিয়া বধ করিয়াছে, দামেস্কের ঘরে ঘরে সকলে আমোদ-