পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বিষাদ-সিন্ধু উপক্রমণিকা
উপক্রমণিকা

গ বিষা-সিন্ধু—উপক্রমণিকা এ রােগের কুলুখ এমন অসাধারণ বিষসংযুক্ত ছিল যে, তিনি বিষের যন্ত্রণায় ভূতলে গড়াগড়ি দিতে দিতে অস্থির হইয়া পড়িলেন। বন্ধুবান্ধব সকলের কর্ণেই মাবিয়ার পীড়ার সংবাদ গেল। অনেকরূপ চিকিৎসা হইল ; কিন্তু ক্রমশঃ বৃদ্ধি ব্যতীত কিছুতেই যন্ত্রণার হ্রাস হইল না। মাবিয়ার জীবনের আশায় সকলেই নিরাশ হইলেন। ক্রমে ক্রমে তদ্বিষয় প্রভু মােহাম্মদের কর্ণগােচর হইলে তিনি মহাব্যস্তে মাবিয়ার নিকট আসিয়া ঈশ্বরের নাম করিয়া বিষসংযুক্ত স্থানে ফুংকার প্রদানে উদ্যত হইলেন। এমন সময় স্বর্গীয় দূত আসিয়া বলিলেন, “হে মােহাম্মদ! কি করিতেছ ? সাবধান ! ঈশ্বরের নাম করিয়া মন্ত্র পূত করিও না। এ সকল ঈশ্বরের লীলা। তােমার মন্ত্রে মার্বিয়া কখনই আরােগ্য লাভ করিবে না? সাবধান!—ইহার সমুচিত ঔষধ স্ত্রী-সহবাস। স্ত্রী-সহবাস মাত্রেই মাবিয়া বিষম বিষযন্ত্রণা হইতে মুক্তিলাভ করিবে। উহা ব্যতীত এ বিষ নিবারণের ঔষধ জগওে আর দ্বিতীয় নাই।” এই বলিয়া স্বর্গীয় দূত অন্তর্ধান হইলেন। প্রভু মােহাম্মদ শিষ্যগণকে বলিতে লাগিলেন, “ভাই সকল ! ঔষধ নাই। ইহজগতে ইহার উপযুক্ত চিকিৎসা নাই। একমাত্র উপায় স্ত্রী-সহবাস। যদি মাবিয়া স্ত্রী-সহবাস করিতে সম্মত হয়, তবেই তার প্রাণরক্ষা হইতে পারে।” মাবিয়া স্ত্রী-সহবাসে অসম্মত হইলেন। আত্মহত্যা মহাপাপ—প্রভু কর্তৃক এই উপদেশ শুনিতে লাগিলেন। পরিশেষে সাব্যস্ত হইল যে, অশীতিবর্ষীয়া কোন বৃদ্ধা স্ত্রীকে শাস্ত্রানুসারে গ্রহণ করিয়া তাহার সহিত সহবাস করিবেন। কাৰ্যেও তাহাই ঘটিল। বিষম রােগ হইতে মাবিয়া মুক্ত হইলেন ও তাহার জীবন রক্ষা হইল। অসীম করুণাময় পরমেশ্বরের কৌশলের কণামাত্র বুঝিয়া উঠা মানব- প্রকৃতির সাধ্য নহে। সেই অশীতিবর্ষীয়া বৃদ্ধা স্ত্রী কালক্রমে গর্ভবতী হইয়া যথাসময়ে একটী পুত্র-সন্তান প্রসব করিলেন। মাবিয়া পূর্বব হইতে স্থিসঙ্কল্প করিয়াছিলেন যে, যদি পুত্র হয়, তখনই তাহাকে মারিয়া ফেলিবেন। কিন্তু সুকোমল বদনমণ্ডলের প্রতি একবার নয়ন-পাত করিবামাত্রই বৈরীভাব অন্তর হইতে তিরােহিত হইল। হৃদয়ে সুমধুর বাৎসল্যভাবের আবির্ভাব হইয়া