পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৭
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােবিংশ প্রবাহ

 মােস্‌লেম হতাশ হইলেন না; কিন্তু তাঁহাকে নূতন প্রকার চিন্তার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতে হইল। নিজ সৈন্য এবং কুফার সৈন্যের সাহায্যে যে যে প্রকারে যুদ্ধের পরিকল্পনা করিয়াছিলেন এক্ষণে তিনি তাহা পরিবর্ত্তন করিয়া নূতনরূপ চিন্তায় নিমগ্ন হইলেন। ওদিকে ওত্‌বে অলীদ কি মনে করিয়া আর অগ্রসর হইলেন না। আপন আয়ত্তাধীনে সম্ভবমত দূরে থাকিয়া দ্বৈরথ যুদ্ধ আরম্ভ করিবার অভিপ্রায়ে মহাবীর ওত্‌বে অলীদ গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিলেন, “মোস্‌লেম! যদি নিতান্তই যুদ্ধসাধ হইয়া থাকে, তবে আইস, আমরা উভয়ে যুদ্ধ করি; জয়-পরাজয় আমাদের উভয়ের উপরই নির্ভর। অনর্থক অন্য অন্য প্রাণ বিনষ্ট করিবার আবশ্যকতা কি?”

 মােস্‌লেম সে কথার উত্তর না দিয়া কতক সৈন্যসহ ওত্‌বে অলীদকে ঘিরিয়া ফেলিলেন। ওত্‌বে অলীদ আবার বলিলেন, “মােস্‌লেম! এই কি যুদ্ধের রীতি, না বীরপুরুষের কর্ত্তব্য কার্য্য? কে তােমাকে বীর-আখ্যা দিয়াছিল? কহ মহারথি! একি মহারথী-প্রথা?”

 মােস্‌লেম সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া সৈন্যদিগকে বলিলেন— “ভ্রাতৃগণ! বিধর্ম্মীর হস্তে মৃত্যুতে বড়ই পুণ্য। প্রভু মােহাম্মদের দৌহিত্রগণকে যাহারা, যে পাপাত্মারা, যে নরপিশাচেরা শত্রু মনে করে— তাহাদের প্রাণবিনাশের চেষ্টা করিয়া তাহাদের হস্তে প্রাণিবিসর্জ্জন করিতে পারিলে, তাহা অপেক্ষা ইহজগতে আর কি অধিকতর সুখ আছে? এক দিন মরিব বলিয়াই জন্মিয়াছি। যে মরণে সুখ,—সহস্র সহস্র পাপ থাকিলেও স্বর্গসুখ ভােগের অধিকারী, এমন মরণে কে না সুখী হয়? আমরা যুদ্ধে জয়ী হইব না, ইহার আশাও করি না। তবে বিধর্ম্মীর হস্তস্থিত তরবারি ইস্‌লাম-শােণিতে রঞ্জিত হইয়া পরিণামে আমাদিগকে স্বর্গসুখের অধিকারী করিবে, এই-ই আমাদের আশা। জয়ের আশা আর মনে আনিও না, আজই যুদ্ধের শেষ, আজই আমাদের জীবনের শেয।” মোস্‌লেম এই বলিয়া ওত্‌বে অলীদের প্রতি অস্ত্রবর্ষণ করিতে লাগিলেন। মারওয়ান দেখিলেন যেন, অলীদের পরমায়ু শেষ হইল, সমুদয় সৈন্য একত্র করিয়া মােস্‌লেম আক্রমণ করিয়াছে; ক্ষণকাল বিলম্ব না করিয়া মারওয়ান সমুদয় সৈন্যসহ মোস্‌লেমকে