পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৮৬

 “কি কথা?—আপনার শত্রুকুল নির্ম্মূল করিতে আমার বংশ নিপাত করিলাম, তথাপি আপনার নিকট যশোলাভ করিতে পারিলাম না। যাহার জন্য এত কাণ্ড, তাহা—অর্থাৎ সে মোহরগুলি পাইব কি না, তাহাতেও এখন সন্দেহ হইতেছে!”

 মন্ত্রীদল মধ্য হইতে এক জন বলিলেন,—“আপনার পুরস্কার ধরা আছে, আর তিনটি খুন কোথায় কি প্রকারে করিলেন, বলুন শুনি।”

 “তিনটি খুনই বটে! কেন করিলাম, শুনুন। আমার দুই পুত্র, এক স্ত্রী—এই তিনটি। তাহারা কিছুতেই এই শত্রু বালকদের শির কাটিতে দিবে না। বাধা দিতে আরম্ভ করিল! একে একে বাধা দিল। একে একে লাল বসন পরাইয়া ফোরাত নদীর কূলে তাহাদিগকে শয়ন করাইয়া দিলাম। এক স্থানেই সকলের শিরশ্ছেদ-রক্তপাত—নড়াচড়া-পরে সকলের দেহই ফোরাতজলে ক্ষেপণ—অবগাহন—নিমজ্জন—বিসর্জ্জন!”

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ বলিলেন,—“এ দৃশ্য আমি দেখিতে পারি না! নিরপরাধ বালকদ্বয়ের শির যে আপন হাতে কাটিতে পারে, তাহাকে বাধা দিয়াছিল কাহারা? এই নরপিশাচের সন্তান দুই জন; আর সহধর্ম্মিণী স্বয়ং। তাহাদিগকেও সে বিনাশ করিয়াছে! এমন নর-রাক্ষসের শির কিছুতেই স্বস্থানে থাকিতে পারে না। হায়! হায়! একই সময়ে পাঁচটি মানবজীবন শেষ করিয়াছে। আমার আদেশ মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়-হন্তা হারেস্‌ এই দুই বালকের শির সম্মানের সহিত মাথায় করিয়া ফোরাত-কূলে লইয়া যাইবে। এই দুই বালকের মস্তক সে যে স্থানে দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়াছে, সেই স্থানে সেই অস্ত্রে সেই মহাপাপীর মস্তক দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া, শৃগাল-কুকুরের ভক্ষণের সুযোগ করিয়া দিও। ফোরাত-জলে নিক্ষেপ করিয়া—জল অপবিত্র করিও না। মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়ের দেহখণ্ড ফোরাত জলে ভাসাইয়া দিয়াছে, কি করিব কোন উপায় নাই। বিশেষ সন্ধান করিয়া দেখিও। যদি এই যুগলভ্রাতার মৃতদেহ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তবে রীতিমত কাফন দাফন করিয়া, যথোচিতরূপে অন্ত্যেষ্টি-ক্রিয়াদি করিয়া আমার আদেশ সম্পূর্ণ করিও এবং কার্য্যশেষে আমাকে সংবাদ জ্ঞাপন করি।”