পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৯০

কি আশ্চর্য্য! এমন আশ্চর্য্য ঘটনা জগতে কোন স্থানে ঘটিয়াছে কি না, তাহাও সন্দেহ। আমরা বনে নানা প্রকার কাষ্ঠ সংগ্রহ করিতে গিয়াছিলাম; যে কোন বৃক্ষের যে কোন স্থানে কুঠারাঘাত করিলাম, সেই বৃক্ষেই অজস্র শোণিত-চিহ্ন দেখিয়া ভয় হইল। ভয়ে ভয়ে ফিরিয়া আসিলাম। এই দেখুন! আমাদের সকলের কুঠারেও সদ্যশোণিত-চিহ্ন বিদ্যমান রহিয়াছে।”

 হোসেন কুঠার সংযুক্ত শোণিত দর্শনে বলিতে লাগিলেন, “নিশ্চয় এই-ই কারবালা। তোমরা সকলে এই স্থানে ‘শহীদ’-স্বর্গসুখ ভোগ করিবে, তাহারই লক্ষণ ঈশ্বর এই শোণিত-চিহ্নে দেখাইতেছেন। উহাতে আর আশ্চর্যান্বিত হইও না, ঐ বন হইতেই কাষ্ঠ সংগ্রহ করিয়া আন। দারুরস শোণিতে পরিণত হইয়াছে, দেখিয়া আর ভীত হইও না।”

 এমামের বাক্যে সকলেই আনন্দোৎসাহে শিবির সংস্থাপনে যত্নবান হইলেন। সকলেই আপন আপন স্থানোপযোগী এবং এমামের পরিজনবর্গের অবস্থানের জন্য অতি নির্জ্জন স্থানে শিবির সংস্থাপন করিয়া সকলেই যথাসম্ভব বিশ্রাম করিতে লাগিলেন।

 আরব দেশে দাসের অভাব নাই! যে সকল ক্রীতদাস হোসেনের সঙ্গে ছিল, তাহারা কয়েকজন একত্রিত হইয়া ফোরাতের অন্বেষণে বহির্গত হইয়াছিল; ম্লানমুখে ফিরিয়া আসিয়া সকাতরে এমামের নিকট তাহারা বলিতে লাগিল, “বাদশাহ্-নামদার! আমরা ফোরাত নদীর অন্বেষণে বহির্গত হইয়াছিলাম। পূর্ব্ব উত্তর প্রদক্ষিণ করিয়া শেষে পশ্চিম দিকে দেখিতে পাইলাম যে, ফোরাত নদী কুলুকুলুরবে দক্ষিণবাহিনী হইয়া প্রবাহিত হইতেছে। জলের নির্ম্মলতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া জলপানেচ্ছা আরও চতুর্গুণ বলবতী হইল, কিন্তু নদীর তীরে অসংখ্য সৈন্য সশস্ত্রে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া অতি সতর্কতার সহিত নদীর জল রক্ষা করিতেছে। যত দূর দৃষ্টির ক্ষমতা হইল, দেখিলাম—এমন কোন স্থানই নাই যে, নির্ব্বিঘ্নে এক বিন্দু জল লইয়া পিপাসা নিবৃত্তি করা যায়। আমরা সৈন্যদিগকে কিছু না বলিয়া যেমনই নদীতীরে যাইতে অগ্রসর হইয়াছি, তাহারা অমনই অতি কর্কশ বাক্যে বিশেষ অপমানের সহিত আমাদিগকে