পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৯
মহরম পর্ব্ব—চতুর্বিংশ প্রবাহ

না, নদীকূলও ছাড়িয়া দিল না। আবদুল ওহাব পুনরায় সক্রোধে বলিতে লাগিলেন, “যোদ্ধাই হউক, বীরেন্দ্রই হউক, উদ্যোগী পুরুষই হউক,—সেই ধন্য, যে সময়কে অতি মূল্যবান জ্ঞান করে। তোদের সকল বিষয়েই জ্ঞান আছে, দেখিতেছি। যদি সাহস থাকে, যদি আবদুল ওহাবের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে কাহারও ইচ্ছা হয়, তবে শীঘ্র আয়্। আবদুল ওহাব আজ বিধর্ম্মীর রক্তপাতে ফোরাত-জল রক্তবর্ণে রঞ্জিত করিয়া দ্বিগুণ রঞ্জনে রঞ্জিত করিবে, এই আশাতেই তোদের সম্মুখে আসিয়াছে। শত্রুসম্মুখীন হইতে তোদের এত বিলম্ব কেন? শত্রু যুদ্ধপ্রার্থী, তোরা বিশ্রামপ্রার্থী। ধিক্ তোদের বীরত্বে! ধিক্ তোদের সাহসে! আজ সাত রাত নয় দিন আবদুল ওহাব জলস্পর্শ করে নাই; ফোরাত নদী তীরে তোরা মহানন্দে ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ করিয়া রহিয়াছিস্। তবু তোদের ইহাতে এত বিলম্ব, এত ভয়! শীঘ্র আয়্। একে একে তোদের সকলকেই নরকে প্রেরণ করিতেছি।”

 বিপক্ষদল হইতে এক দীর্ঘকায় বীরপুরুষ বহির্গত হইয়া অতি উচ্চ লোহিতবর্ণ অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণপূর্ব্বক বিশেষ দক্ষতার সহিত অসি চালনা করিতে করিতে আবদুল ওহাবের সম্মুখীন হইয়া বলিতে লাগিলেন, “মূর্খেরাই দর্প করে। কাপুরুষেরাই অহঙ্কার প্রদর্শন করিয়া থাকে। শৃগাল! বাক্‌চাতুরি ছাড়িয়া পুনরায় শিবিরে প্রস্থান কর্‌—তোকে মারিয়া কি হইবে? আবদুল ওহাব, তুই কাহার সন্তান! তোর জননী কাহার কন্যা! সেই সকল পরিচয় লইয়া আসিতেই আমার একটু বিলম্ব হইয়াছে। তুই কেন এই নব যৌবনে পরের জন্য আপন প্রাণ হারাইবি? তোকে বধ করিলে এজিদের নিকট যশোলাভ হইবে না। তোদের হোসেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসিতে বল্‌। তুই যদি কিছু দিন সংসারে বাস করিতে বাসনা করিস্‌, ফিরিয়া যা, তোকে চাহিনা।”

 আবদুল ওহাব ক্রোধে অধীর হইয়া বলিলেন, “বিধর্ম্মী কাফের! এত বড় আস্পর্ধা তোর! অগ্রেই তুই হোসেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে আহ্বান করিস্‌? আবদুল ওহাবের পদাঘাতের কি কিছুমাত্র বল নাই? রে ক্ষুদ্র কীট। চিরশাগত দাস বাঁচিয়া থাকিতে প্রভুকে আহ্বান কেন? অগ্রে আবদুল