পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৭
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

করিয়া যুদ্ধে গমন কর। তোমাকে যুদ্ধে যাইতে দিতে আমার আর কোনও আপত্তি নাই। তোমার পিতা প্রাণবিয়োগের কিছু পূর্ব্বে আমাকে এই কড়ায়ে আবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন: আমার কন্যা সখিনার সহিত তোমার বিবাহ দিব। তুমি সখিনাকে বিবাহ না করিয়া যুদ্ধে যাইতে পারিবে না। তোমার পিতার আজ্ঞা প্রতিপালন, আমাকেও প্রতিজ্ঞা হইতে রক্ষা করা, উভয়ই তোমার সমতুল্য কার্য্য।”

 কাসেম মহাবিপদে পড়িলেন। এতাদৃশ মহাবিপদ সময়ে বিবাহ করিতে হইবে, ইহা ভাবিয়াই তিনি অস্থিরচিত্ত হইলেন। কি করেন, কোন উত্তর না দিয়া তিনি মাতার নিকটে সমুদয় বৃত্তান্ত বলিলেন।

 হাস্‌নেবানু বলিলেন, “কাসেম। আমিও জানি, আমার সম্মুখে তোমার পিতা তোমার পিতৃব্যের নিকট এই বিবাহের প্রস্তাব করিয়া তাঁহাকে কড়ারে আবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। শোক, তাপ এবং উপস্থিত বিপদে আমি সমুদয় ভুলিয়া গিয়াছি। ঈশ্বরানুগ্রহে তোমার পিতৃব্যের স্মরণ ছিল বলিয়াই তোমার পিতার উপদেশ প্রতিপালিত হইবে, বোধ হইতেছে। ইহাতে আর কোনও আপত্তি উত্থাপন করিও না। এখনই বিবাহ হউক। প্রাণাধিক! এই বিষাদ-সমুদ্র মধ্যে ক্ষণকালের জন্য একবার আনন্দস্রোত বহিয়া যাউক।”

 কাসেম বলিলেন “জননি! পিতা মৃত্যুকালে আমাকে একখানি কবচ দিয়া বলিয়া গিয়াছেন: যে সময় তুমি কোন বিপদে পড়িবে, নিজ বুদ্ধির দ্বারা যখন কোন উপায় স্থির করিতে না পারিবে, সেই সময়েই এই কবচের অপর পৃষ্ঠ দেখিয়া তদুপদেশ মত কার্য্য করিও। আমার দক্ষিণ হস্তে যে কবচ দেখিয়াছেন, ইহাই সেই কবচ। আপনি যদি অনুমতি করেন, তবে আজ এই মহাঘোর বিপদ সময়ে কবচের অপর পৃষ্ঠা পাঠ করিয়া দেখি,—কি লেখা আছে।”

 হাস্‌নেবানু বলিলেন, “এখনই দেখ! তোমার আজিকার বিপদের ন্যায় আর কোন বিপদই হইবে না। কবচের অপর পৃষ্ঠা দেখিবার উপযুক্ত সময়ই এই!” এই কথা বলিয়াই হাস্‌নেবানু কাসেমের বাহু