পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৯
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

বিবাহ অথচ বিষাদ! পুরবাসিগণ সখিনাকে ঘিরিয়া বসিলেন। রণবাদ্য তখন সাদীয়ানা বাদ্যের কার্য্য করিতে লাগিল। অঙ্গরাগাদি সুগন্ধি দ্রব্যের কথা কাহারও স্মরণ হইল না;—কেবল কণ্ঠবিনির্গত নেত্রজলেই সখিনার অঙ্গ ধৌত করিয়া পুরবাসিনীরা পরিষ্কৃত বসনে সখিনাকে সজ্জিত করিলেন, তঁহার কেশগুচ্ছ পরিপাটী করিয়া বাঁধিয়া দিলেন, সভ্যদেশ-প্রচলিত বিবাহের চিহ্নস্বরূপ দুই একখানি অলঙ্কার সখিনার অঙ্গে ধারণ করাইলেন। সখিনা পূর্ণবয়স্ক, তিনি সকলই বুঝিতেছেন। কাসেম অপরিচিত নহেন। প্রণয়, ভালবাসা, উভয়েরই রহিয়াছে। ভ্রাতাভগ্নীর মধ্যে যেরূপ বিশুদ্ধ ও পবিত্র প্রণয় হইয়া থাকে, তাহা কাসেম-সখিনার বাল্যকাল হইতেই রহিয়াছে। কাহারও স্বভাব কাহারও অজানা নাই, বাল্যকাল হইতে এই উপস্থিত যৌবনকাল পর্য্যন্ত একত্র ক্রীড়া, একত্র ভ্রমণ, একত্র বাস নিবন্ধন উভয়েরই মনে সবিশেষ সরল প্রণয় জন্মিয়াছে। উভয়েই এক পরিবার, এক বংশসম্ভূত, উভয়েরই পিতা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা, সুতরাং লজ্জা, মান, অভিমান প্রভৃতি অপর স্বামী-স্ত্রীতে যেরূপ হইবার সম্ভাবনা, তাহা ইহাদের নাই। লগ্ন সুস্থির হইল। ওদিকে এজিদের সৈন্যমধ্যে ঘোর রবে যুদ্ধের বাজনা বাজিতে লাগিল। ফোরাত নদীর কূল উদ্ধার করিতে আর কোন বীরপুরুষই হোসেনের পক্ষ হইতে আসিতেছে না দেখিয়া, আজিকার যুদ্ধে জয় সম্ভব বিবেচনায়, তুমুল শব্দে বাজনা বাজিতে লাগিল। সেই শব্দে ফোরাতকূল হইতে কারবালার অন্তঃসীমা পর্য্যন্ত প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। হোসেনের শিবিরে পতিপুত্র-শোকাতুরা অবলাগণের কাতর নিনাদে সপ্ততল আকাশ ভেদ করিতে লাগিল। সেই কাতরধ্বনি ঈশ্বরের সিংহাসন পর্য্যন্ত যাইতে লাগিল! হোসেন বাধ্য হইয়া এই নিদারুণ দুঃখ সময়ে কাসেমের হস্তে প্রাণাধিকা দুহিতা সখিনাকে সমর্পন করিলেন। বিধিমতে বিবাহকার্য্য সম্পন্ন হইল। শুভ কার্য্যের পর আনন্দাশ্রু অনেকের চক্ষে দেখা যায়, কিন্তু হোসেনের শিবির পরিজনগণের চক্ষে কোন প্রকার অশ্রুই দেখা যায় নাই। কিন্তু কাসেমের বিবাহ বিষাদ-সিন্ধুর সর্ব্বাপেক্ষা