কাসেমের দেহবিনির্গত শোণিত-প্রবাহে সখিনার পরিহিত বস্ত্র বক্তবর্ণ হইল। কাসেম সখিনার গলদেশে বাহু বেষ্টন করিয়া দণ্ডায়মান রহিলেন—নিজ বশে আর দাঁড়াইবার শক্তি নাই, শরাঘাতে সমুদয় অঙ্গ জরজর হইয়া সহস্র পথে শোণিতধারা শরীর বহিয়া মৃত্তিকায় পড়িতেছে। সজ্জিত মস্তক ক্রমশঃই সখিনার স্কন্ধদেশে নত হইয়া আসিতে লাগিল। সখিনার বিষাদিত বদন নিরীক্ষণ করা কাসেমের অসহ্য হইল বলিয়াই তাঁহার চক্ষু দুইটি নীল বর্ণ ধারণ করিয়া ক্রমেই বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল। সে সময়েও কাসেম বলিলেন, “সখিনা! নব অনুরাগে পরিণয়-সূত্রে তোমারি প্রণয়-পুষ্পহার কাসেম আজ গলায় পরিয়াছিল; বিধাতা আজই সে-হার ছিন্ন করিয়া ফেলিলেন। জগতে তোমাকে ছাড়িয়া যাইতেছি; দৈহিক সম্বন্ধ-গ্রন্থি ছিঁড়িয়া গেল; কিন্তু সখিনা! সে জন্য তুমি ভাবিও না— কেয়ামতে অবশ্যই দেখা হইবে। সখিনা! নিশ্চয় জানিও, ইহা আর কিছুই নহে, কেবল অগ্রপশ্চাৎ মাত্র। ঐ দেখ, আমার পিতা অমরপুরীর সুবাসিত শীতল জলপূর্ণ মণিময় সোরাহী-হস্তে আমার পিপাসার শান্তির জন্য দাঁড়াইয়া আছেন! আমি চলিলাম।”
কাসেমের চক্ষু একেবারে বন্ধ হইল!—প্রাণবিহঙ্গ দেহপিঞ্জর হইতে অনন্ত আকাশে উড়িয়া হাসানের নিকট চলিয়া গেল। শূন্যদেহ সখিনার দেহযষ্টি হইতে স্থলিত হইয়া ধরাতলে পতিত হইল। প্রবাসীরা সকলেই কাসেমের মৃতদেহ স্পর্শ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।
সখিনা সামীর মৃতদেহ অঙ্গে ধারণ করিয়া করুণ স্বরে বলিতে লাগিলেন, “কাসেম! একবার চাহিয়া দেখ, তোমার সখিনা এখনও সেই বিবাহ-বেশ পরিয়া রহিয়াছে। কেশগুচ্ছ যে ভাবে দেখিয়াছিলে, এখনও সেইভাবে রহিয়াছে। তাহার একগাছিও স্থানভ্রষ্ট হয় নাই। লোহিত বসন পরিধান করিয়া বিবাহ হয় নাই; প্রাণেশ্বর! তাই আপন শরীরের রক্তধারে সেই বসন রঞ্জিত করিয়া দেখাইলে! আমি আর কি করিব? জীবিতেশ! জগতে সখিনা বাঁচিয়া থাকিতে তোমার দেহবিনির্গত শোণিত বিন্দু সে মৃত্তিকাসংলগ্ন হইতে দিবে না।” এই বলিয়া কাসেমের দেহবিনির্গত