পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু

আমার মনে যে কি কষ্ট হইতেছে, তাহা ঈশ্বরই জানেন। যদি সকল দিক রক্ষা করিয়া কার্য্য উদ্ধার করিতে পার, তবেই সর্ব্বপ্রকার মঙ্গল, এজিদও প্রাণে বাঁচে, আমিও নিশ্চিতভাবে ঈশ্বর-উপাসনা করিতে পারি।”

 শেষ কথাগুলি শ্রবণ করিয়া বৃদ্ধা মহিষী অনুকূলভাবে বিজ্ঞাপনসূচক মস্তক সঞ্চালন করিলেন। তখন তাঁহার মনে যে কথা ছিল, রসনা তাহা প্রকাশ করিল না। আকার-ইঙ্গিতে পতিবাক্যে সায় দিয়া মৌনাবলম্বন করিলেন। মৌন যেন কথা কহিয়া কহিল, ‘এই সংকল্পই স্থির’।

দ্বিতীয় প্রবাহ

 মহারাজের সহিত মহিষীর পরামর্শ হইল। এজিদও কথার সূত্র পাইয়া তাহাতে নানা প্রকার শাখাপ্রশাখা বাহির করিয়া বিশেষ সতর্কতার সহিত আবদুল জব্বারের নিকট ‘কাসেদ’ প্রেরণ করিলেন।

 পাঠক! কাসেদ যদিও বার্ত্তাবহ, কিন্তু বঙ্গদেশীয় ডাকহরকরা, কি পত্রবাহক মনে করিবেন না। রাজপুত্র-বাহক, অথচ সভা ও বিচক্ষণ—মহামতি মুসলমান লেখকগণ ইহাকেই ‘কাসেদ বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া গিয়াছেন। কাসেদের পরিচ্ছদ সভ্যতাবর্জ্জিত নহে। সুধীর, সুগম্ভীর, সত্যবাদী, মিষ্টভাষী, সুশ্রী না হইলে কেহ কাসেদ-পদে বরিত হইতে পারে না। তবে দূতে ও ‘কাসেদে’ অতি সামান্য প্রভেদ মাত্র, ‘কাসেদ’ দূতের সমতুল্য মাননীয় নহে। বিশেষভাবে মনোনীত করিয়াই আবদুল জব্বারের নিকট কাসেদ প্রেরিত হইয়াছিল। আবদুল জব্বার ভদ্রবংশসম্ভূত, অবস্থাও মন্দ নহে, স্বচ্ছন্দে ভদ্রতা রক্ষা করিয়া জীবিকা নির্ব্বাহ করিতে পারিতেন; তজ্জন্য পরের দ্বারস্থ হইতে হইত না। কিন্তু তাঁহার ধনলিপ্সা অত্যন্ত প্রবল ছিল। কিসে দশ টাকা উপার্জ্জন করিবেন, কি উপায়ে নিজ অবস্থার উন্নতি করিবেন, কি কৌশলে ঐশ্বর্য্যশালী হইয়া অপেক্ষাকৃত অধিকতর সুখস্বাচ্ছন্দ্যে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিবেন, এই চিন্তাই সর্ব্বদা তাঁহার মনে জাগরূক ছিল। তাঁহার একমাত্র স্ত্রী জয়নাব স্বামীর অবস্থাতেই পরিতৃপ্তা