পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৪০

বোঝা বহন করিতে হইবে, এ কথা কি সেই প্রভুভক্ত বাকশক্তিহীন পশু-অন্তরে উদয় হইয়াছিল? সীমারের দিকে সে আর ছুটিল না, হোসেনের মৃত শরীরের নিকটেও আর রহিল না। বিপক্ষগণের বাধা, কৌশল অতিক্রম করিয়া মহাবেগে হোসেনের শিবিরাভিমুখে সে দৌড়াইয়া চলিল। সকলেই দেখিল, দুল্‌দুলের চক্ষু জলে পরিপূর্ণ। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ, মারওয়ান, ওমর এবং আর আর যোদ্ধাগণ দুল্‌দুলের পশ্চাৎ পশ্চাৎ হোসেন-শিবিরাভিমুখে বেগে ছুটিলেন। শিবিরমধ্যে বীর বলিতে আর কেহ নাই, একমাত্র জয়নাল আবেদীন! হোসেনের উপদেশক্রমে পরিজনের জয়নালকে বিশেষ সাবধানে গোপনভাবে রাখিয়াছেন। হাস্‌নেবানু কাসেম-দেহ বক্ষে ধারণ করিয়া শোকসন্তপ্ত হৃদয়ের জ্বলন্ত হতাশনে শোণিতের আহুতি দিতেছেন। সখিনা মৃত পতির পদপ্রান্তে ধূলায় লুটাইয়া অচেতনভাবে পড়িয়া রহিয়াছেন। যিনি যেখানে যে ভাবে ছিলেন, তিনি সেইখানেই সেই ভাবেই আছেন। কাহারও মুখে কোন কথাই নাই। নীরব! চতুর্দ্দিক নীরব। কিন্তু আকাশ পাতাল বায়ু ভেদ করিয়া যে একটি রব হইতেছে, বোধ হয়, শোকতাপ-পিপাসায় কাতরপ্রযুক্ত এতক্ষণ কেহই সে রব শুনিতে পান নাই। শাহ্‌রেবানুর মন, চক্ষু, কর্ণ, চিন্তা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন দিকে। সে রব তিনি শুনিলেন—তাঁহার অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। আবার তিনি শুনিলেন,—স্পষ্ট শুনিলেন,বন, উপবন, গগন, বায়ু, পর্ব্বত, প্রান্তর ভেদ করিয়া রব উঠিতেছে, “হায় হোসেন! হায় হোসেন!! হায় হোসেন!!!”

  শাহ্‌রেবানুর মোহতন্দ্রা ভাঙ্গিয়া গেল, হৃদয় কাঁপিয়া উঠিল। তিনি মুখে বলিয়া উঠিলেন, “হায়! কি হইল? কি ঘটিল? কে বলিতেছে? চতুর্দ্দিক হইতে কেন রব হইতেছে? নাম উচ্চারণ কেন ‘হায় হায়’ করিতেছে? ‘হায় হায়’! কি নিদারুণ কথা! হায় রে। আবার সেই রব! আবার সেই অন্তরভেদী ‘হায় হায় রব!!”

 “এ কি কথা! যে সকল পবিত্র বসন, পবিত্র অস্ত্র, তিনি পবিত্রভাবে ভক্তিসহকারে অঙ্গে ধারণ করিয়া গিয়াছেন, তাহাতে কি কোন সন্দেহ