পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৫
উদ্ধার পর্ব্ব— দ্বিতীয় প্রবাহ

প্রচণ্ডবেগে হু হু করিতেছে—শরীরের প্রতি লোমকূপ হইতে সেই মহা অগ্নির জ্বলন্ত শিখা মহাতেজে নির্গত হইয়া জীবন্ত জীবন জ্বালাইতেছে, তাঁহাদের নিকট জলের আদর হইল না! ফোরাত-জলে সে জ্বলন্ত আগুন নির্ব্বাপিত হইল না; বরং আরও সহস্রগুণ জ্বলিয়া উঠিল।

 মারওয়ান একটু উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “বন্দিগণ! শিবিরস্থ বন্দিগণ! প্রস্তুত হও। যুদ্ধাবসানে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত পক্ষকে রাখিবার বিধি নাই। প্রস্তুত হও—তোমরা মহারাজ এজিদের বন্দী,—মারওয়ানের হস্তে। শীঘ্র প্রস্তুত হও। এখনই দামেস্কে যাইতে হইবে।”

দ্বিতীয় প্রবাহ

 রে পথিক! রে পাষাণহৃদয় পথিক! কি লোভে এত ত্রস্তে দৌড়াইতেছ? কি আশায় খণ্ডিতশির বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করিয়া লইয়া যাইতেছ? এ শিরে হায়— এ খণ্ডিতশিরে তোমার প্রয়োজন কি? সীমার! এ শিরে তোমার আবশ্যকতা কি? হোসেন তোমার কি করিয়াছিল? তুমি ত আর জয়নাবের রূপে মোহিত হইয়াছিলে না? জয়নাব এমাম হাসানের স্ত্রী। হোসেনের শির তোমার বর্শাগ্রে কেন? তুমিই বা শির লইয়া উর্দ্ধশ্বাসে এত বেগে দৌড়াইতেছ কেন?—যাইতেছই বা কোথা? সীমার! একটু দাড়াও। আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়া যাও। কার সাধ্য তোমার গমনে বাধা দেয়? কার ক্ষমতা তোমাকে কিছু বলে? তবুও একটু দাঁড়াও। এ শিরে তোমার স্বার্থ কি?—খণ্ডিতশিরে প্রয়োজন কি?—অর্থ? হায় রে পাতকী অর্থ! তুই জগতের সকল অনর্থের মূল। জীবের জীবনের ধ্বংস, সম্পত্তির বিনাশ, পিতা-পুত্রে শত্রুতা, স্বামী-স্ত্রীতে মনোমালিন্য, ভ্রাতা-ভগ্নীতে কলহ, রাজা-প্রজায় বৈরীভাব, বন্ধু-বান্ধবে বিচ্ছেদ, বিবাদ, বিসম্বাদ, কলহ, বিরহ, বিসর্জ্জন, বিনাশ,—এ সকলই তোমার জন্য! সকল অনর্থের মূল ও কারণই তুমি। তোমার কি মোহিনী শক্তি!—কি মধুমাখা বিষসংযুক্ত প্রেম! রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই তোমার জন্য