পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৫২

 দামেস্কে লইয়া যাইব না। টাকা অতি তুচ্ছ পদার্থ, উচ্চহৃদয়ে টাকার খাত-প্রতিঘাত নাই। দয়া, দাক্ষিণ্য, ধর্ম্ম, সুনাম, যশঃকীর্তি, পরদুঃখকাতরতা—এই সকল মহামূল্য রত্নের নিকট টাকার মূল্য কি রে ভাই?”

 ‘ওহে ধার্ম্মিকবর! আমি ও-সকল কথা অনেক জানি। টাকা যে কি জিনিস, তাহাও ভাল করিয়া চিনি। মুখে অনেকেই ‘টাকা অতি তুচ্ছ’, ‘অর্থ অনর্থের মূল’ বলিয়া থাকে, কিন্তু জগৎ এমনই ভয়ানক স্থান যে, টাকা না থাকিলে তাহার স্থান কোথাও নাই—সমাজে নাই, স্বজাতির নিকটে নাই—ভ্রাতা-ভগ্নীর নিকট একটি কথা বলিবার সুযোগও নাই! স্ত্রীর ন্যায় ভালবাসে, বল ত জগতে আর কে আছে? টাকা না থাকিলে অমন অকৃত্রিম ভালবাসারও আশা নাই; কাহারও নিকট সম্মান নাই। টাকা না থাকিলে রাজায় চিনে না, সাধারণ মান্য করে না, বিপদে জ্ঞান থাকে না! জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তেও টাকা, জগতে টাকারই খেলা! টাকা যে কি পদার্থ, তাহা তুমি চেন বা না চেন, আমি বেশ চিনি। আর তুমি নিশ্চয় জানিও, আমিও নেহাৎ মূর্খ নহি, আপন লাভালাভ বেশ বুঝিতে পারি। যদি ভাল চাও, যদি আপন প্রাণ বাঁচাইতে চাও, তবে শীঘ্র খণ্ডিত মস্তক আনিয়া দাও। রাজদ্রোহীর শাস্তি কি? ওরে পাগল! রাজদ্রোহীর শাস্তি কি তাহা জান?”

 “রাজদ্রোহীর শাস্তি আমি বিশেষরূপে জানি। দেখ ভাই, তোমার সহিত বাদবিসম্বাদ ও কৌশল করিতে আমার ইচ্ছামাত্র নাই। তুমি মহারাজ এজিদের সৈনিক, আমি তাহার অধীনস্থ প্রজা। সাধ্য কি, রাজকর্মচারীর আদেশ অবহেলা করি? একটু অপেক্ষা খণ্ডিত-শির আনিয়া দিতেছি, মস্তক পাইলেই ত ভাই তুমি ক্ষান্ত হও?”

 “হাঁ, মস্তক পাইলেই আমি চলিয়া যাই, ক্ষণকালও এখানে থাকিব না। আর ইহাও বলিতেছি—মহারাজের নিকট তোমার প্রশংসাই করিব। আমাকে আদর-আহলাদে স্থান দিয়াছ, অভ্যর্থনা করিয়াছ, এ সকলই বলিব। হয় ত তুমি ঘরে বসিয়া কিছু কিছু পুরস্কারও পাইতে পার! শীঘ্র শির আনিয়া দাও।”