পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬১
উদ্ধার পর্ব্ব—তৃতীয় প্রবাহ

ক্রমে মনের কপাট খুলিয়া দেখাইবেন, শেষে সজল নয়নে দুঃখের কান্না কঁদিবেন?—তাহা আর সাহস হইল না! কৌশলে হোসেন-পরিবারের হস্ত হইতে অস্ত্রাদি অপহরণ করিবার মানসে সে সময়ে তিনি আর বেশী বাক্য ব্যয় করিলেন না। কেবল জয়নাল আবেদীনকে বলিলেন, “কি সৈয়দজাদা, তুমি কি করিবে?”

 জয়নাল আবেদীন সক্রোধে বলিলেন, “তোমার প্রাণবধ করিয়া দামেস্কনগরের রাজা হইব।”

 এজিদ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তোমার আছে কি? তুমি মাত্র একা, অথচ বন্দী, তোমার জীবন আমার হস্তে। মনে করিলে মুহূর্ত্ত মধ্যে তোমাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া শৃগাল-কুকুরের উদরে দিতে পারি, এ অবস্থাতেও আমাকে মারিয়া দামেস্কের রাজা হইবার সাধ আছে?”

 “আমার মনে যাহা উদয় হইল বলিলাম, এখন তোমার যাহা ইচ্ছা হয় কর। ‘ইহা পার, উহা পার’ বলিয়া আমার নিকট গরিমা দেখাইয়া ফল কি?”

 “ফল যাহা তাহা ত দেখিয়াই আসিয়াছ! এখানেও কিছু দেখ, একটি ভাল জিনিস তোমাদিগকে দেখাইতেছি, দেখ!”

 এজিদ হোসেন-মস্তক পূর্বেই এক সুবর্ণপাত্রে রাখিয়া তদুপরি মূল্যবান বস্ত্রের আবরণ দিয়া রাখিয়াছিলেন। হোসেনের অল্পবয়স্কা কন্যা ফাতেমাকে এজিদ নিকটে বসাইলেন এবং বলিলেন, “বিবি! তোমরা ত খর্জ্জুর-প্রিয়, এইক্ষণে যদি মদিনার খর্জ্জুর পাও, তাহা হইলে কি কর?”

 “কোথায় খর্জ্জুর? দিন, আমি খাইব?”

 এজিদ বলিলেন, “ঐ পাত্রে খর্জ্জুর রাখিয়াছি, আবরণ উন্মোচন করিলেই দেখিতে পাইবে। খুব ভাল খর্জ্জুর উহাতে আছে। তুমি একা খাইও না, সকলকেই কিছু কিছু দিও।”

  ফাতেমা বড় আশা করিয়া খর্জ্জুর-লোভে পাত্রের উপরিস্থিত বস্ত্র উন্মোচন করিয়া বলিলেন, “এ কি? এ যে মানুষে কাটা-মাথা! এ যে আমারই পিতা!”—এই বলিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। পরিজনের হোসেনের ছিন্ন