পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৩
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

এজিদ মনে মনে যে সকল সঙ্কল্প রচনা করিয়াছিলেন, দুরাশা-সূত্রে আকাশ কুসুমে যে মালা গাঁথিয়াছিলেন, দেখিতে দেখিতে তাহার কিছুই থাকিল না। অতি অল্প সময় মধ্যে আশাতে আশা, কুসুমে কুসুম মিলিয়া মিশিয়া এক হইয়া গেল। ঐশ্বরিক ঘটনায় ধার্ম্মিকের আনন্দ, চিত্তের বিনোদন,—কিন্তু পাপীর ভয়, তাহার মনের অস্থিরতা! এজিদ ভয়ে কঁপিতে লাগিলেন; কি করিবেন, কিছুই ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলেন না। অস্ফুটস্বরে তিনি এইমাত্র বলিলেনঃ “বন্দিগণকে কারাগারে লইয়া যাও।”

চতুর্থ প্রবাহ

 কথা চাপিয়া রাখা বড়ই কঠিন। কবি কল্পনার সীমা পর্যন্ত যাইতে হঠাৎ কোন কারণে বাধা পাইলে তাহার মনে ভয়ানক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সমাজের এমনই কঠিন বন্ধন, এমনই দৃঢ় শাসন যে, কল্পনা-কসুমে আজ মনোমত হার গাঁথিয়া পাঠক-পাঠিকাগণের পবিত্র গলায় দোলাইতে পারিলাম না। শাস্ত্রের খাতিরে নানা দিকে লক্ষ্য রাখিতে হইতেছে। হে ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্ ভগবান্। সমাজের মূর্খতা দূর কর। কুসংস্কার-তিমির সজ্ঞান-জ্যোতিঃপ্রভায় বিনাশ কর। আর সহ্য হয় না। যে পথে যাই, সেই পথেই বাধা। সে পথের সীমা পর্যন্ত যাইতে মনের গতিরোধ হয়। তাহাতে জাতীয় কবিগণের বিভীষিকাময় বর্ণনায় বাধা জন্মায়, চক্ষে ধাঁধা লাগাইয়া দেয়; কিন্তু তাহারাও যে কবি, তাঁহাদের যে কল্পনাশক্তির বিশেষ শক্তি ছিল, তাহা সমাজ মনে করেন না। এই সামান্য আভাষই যথেষ্ট, আর বেশী দূর যাইব না। বিষাদ-সিন্ধুর প্রথম ভাগেই স্বজাতীয় মূর্খ‌দল হাড়ে হাড়ে চটিয়া রহিয়াছেন। অপরাধ আর কিছুই নহে, পয়গম্বর এবং এমামদিগের নামের পূর্ব্বে, বাঙ্গালা ভাষায় ব্যবহার্য্য শব্দে সম্বোধন করা হইয়াছে। মহাপাপের কার্য্যই করিয়াছি! আজ আমার অদৃষ্টে কি আছে, ঈশ্বরই জানেন। কারণ, মর্ত্ত্যলোকে থাকিয়া স্বর্গের সংবাদ প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণকে দিতে হইতেছে!