পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৬৬

সকলেই একেবারে দণ্ডায়মান হইয়া উর্দ্ধনেত্রে আকাশের দিকে বারবার লক্ষ্য করিতে লাগিলেন। আর সকলেই আরব্য ভাষায় “এয়া নবী সালাম আলায়কা, এয়া হবীব সালাম আলায়কা, রসুল সালাম আলায়কা সালওয়াতোল্লাহু আলায়কা” সমস্বরে গাহিয়া উঠিলেন। সহস্র সহস্র, শব্দ কোটী কোটী মুখে মহাঋষি প্রভু হজরত মোহাম্মদের গুণানুবাদ হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে মৃদুমন্দভাবে শূন্য হইতে “হায় হোসেন। হায় হোসেন” রব করিতে করিতে হজরত মোহাম্মদ উপস্থিত হইলেন। তাঁহার পবিত্র পদ ভূপৃষ্ঠ স্পর্শ করিল। এত দিন প্রকৃতি শরীরী জীবের মুখে “হায় হোসেন!” রব শুনিয়াছিল; আজ দেবগণ, স্বর্গের হুর-গেলেমাগণ, মহাঋষি, যোগী, তপস্বী ও অমরাত্মাগণের মুখে শুনিতে লাগিল, “হায় হোসেন! হায় হোসেন!! হায় হোসেন!!!”

 এই গোলযোগ না যাইতে যাইতেই সকলেই যেন মহাদুঃখে নির্ব্বাক-ভাবে দণ্ডায়মান হইলেন। হায় হায়! পুত্রের কি স্নেহ! রক্ত, মাংস, ধমনী অস্থি, শরীরবিহীন আত্মাও অপত্য-স্নেহে ফাটিয়া যাইতেছে, যেন মেঘগর্জ্জনের সহিত শব্দ হইতেছে-“হোসেন! হায় হোসেন!!” মোরতজা আলী “শেরে খোদা” (ঈশ্বরের শার্দ্দূল) স্বীয় পত্নী বিবি ফাতেমা সহ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দৈহিক জীবের জন্য অমরাত্মাগণের শোক অমূলক, খেদ বৃথা। দৈহিক জীবের সহিত তাহাদের কোন সংস্রব নাই, তথাপি পুত্রের এমনই মায়া যে, সকল মূলতত্ত্ব জ্ঞাত থাকিয়াও মহাত্মা আলী মহা খেদ করিতে লাগিলেন। জাগতিক বায়ু প্রকৃত আত্মায় বহমান হইয়া ভ্রমময় মহাশোকের উদ্রেক করিয়া দিল। কুহকিনী দুনিয়ার কুহক জালের ছায়া দেখিয়া হজরত আলী অনেক ভ্রমাত্মক কথা বলিতে লাগিলেন: “আন অশ্ব, আন তরবারি, এজিদের মস্তক এখনই সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত করিব।” হায়! সন্তানের স্নেহের নিকট তত্ত্বজ্ঞান, আত্ম-জ্ঞান, সকলই পরাস্ত।

 সকল আত্মাই হজরত আলীকে প্রবোধ দিলেন। হজরত জেব্রাইল আসিয়া বলিলেন: “ঈশ্বরের আদেশ প্রতিপালিত হউক। শহীদগণের