পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ২৭০
২৭০

তাহার অর্থ কি জগতে কেহ বুঝিয়াছে? বাম হস্তে আবার কে আঘাত করিল? মস্তক খণ্ডিত হইয়াও জন্মভূমি মদিনার দিকে ফিরিয়া রহিয়াছে! হায় রে জন্মভূমি!!

 সীমার মস্তক লইয়া কাপিতে কাঁপিতে গিয়াছিল, আজর সেই মস্তক এই দেহে সংযুক্ত করিবার আশায় পুত্রগণের মস্তক কাটিয়া দিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। এজিদ,—কত খেলা খেলিবেন, কত অপমান করিবেন—এই আশা করিয়া মস্তক দামেস্কে লইয়া গিয়াছিলেন। ধন্য রে কারিগিরি! ধন্য রে ক্ষমতা! জগদীশ! তোমার মহিমা অপার। তুমি যাহা সংঘটন করিয়া একত্র করিতে ইচ্ছা কর,তাহা অত্যুচ্চ পর্ব্বতশিখরে থাক্‌, ঘোর অরণ্যে থাক্‌, অতল জলধিতলে থাক, অনন্ত আকাশে থাক্‌, বায়ু-অভ্যন্তরে থাক—তাহা তুমি সংগ্রহ করিয়া একত্র করিবেই করিবে। এ লীলা বুঝা মানবের সাধ্য নহে, এ কীর্তির কণামাত্র বুঝাও ক্ষুদ্র নরমস্তকের কার্য্য নহে। জগদীশ! প্রাণ খুলিয়া বলিতেছি, “তুমি সর্বশক্তিমান্ অদ্বিতীয় প্রভু! তোমার মহিমা অপার!!”

 স্বর্গীয় দূতগণ, পবিত্র আত্মাগণ শহীদগণের দৈহিক ক্রিয়ায় যোগ দিলেন; স্বর্গীয় সুগন্ধে সমাধিস্থান আমোদিত হইতে লাগিল।

 শহীদগণের শেষক্রিয়া জানাজা করিতে অন্য অন্য মৃত শরীরের ন্যায় জলে স্নান করাইতে হয় না, অন্য বসন দ্বারা শরীর আবৃত করিতে হয় না,—ঐ রক্তমাখা শরীরে, সজ্জিত বেশে, ঐ বীরসাজেই মন্ত্র পাঠ করিয়া মৃত্তিকায় প্রোথিত করিতে হয়। ধর্ম্মযুদ্ধের কি অসীম বল, কি অসীম পরিণাম-ফল।

 দৈহিক কার্য্য শেষ হইলে শহীদগণ দিব্যজ্ঞান লাভ করিয়া ঈশ্বরের আদেশে স্বর্গে নীত হইলেন।