পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৭৩

নারকী ঈশ্বরদ্রোহীর নামে খোৎবা! হা ইসলাম ধর্ম্ম! দুরন্ত জালেমের হস্তে পড়িয়া তোমার এই দুর্দ্দশা! হায় হায়! পুণ্যভূমি মদিনার সিংহাসন যাহার আসন, সেই শেষ ইমাম জয়নাল আবেদীন, কাফেরের নামে খোৎবা পড়িবে? সে খোৎবা শুনিবে কে? আমরা অধীন প্রজা, না যাইয়া, নিস্তার নাই! জগদীশ! আমাদের কর্ণ বধির কর, চক্ষুর জ্যোতিঃ হরণ কর, চলৎ শক্তি রহিত কর।”

 মোহাম্মদীয়গণ নানাপ্রকারে অনুতাপ করিতে লাগিলেন। এজিদপক্ষীয় বিধর্ম্মীরা দর্প করিয়া বলিতে লাগিল, “মোহাম্মদ-বংশের বংশমর্য্যাদার চিরগৌরব এখন কোথায় রহিল? ধন্য মন্ত্রী মারওয়ান!”

 এ সকল সংবাদ বন্দীরা এখনও পর্যন্ত জানিতে পারেন নাই। এজিদ মনে করিয়াছেনঃ “উহাদের জীবন আমার হস্তে,—উহাদের প্রাণ রাখিতে পারি, মুহূর্ত্তে বিনাশও করিতে পারি। জুম্মার দিন জয়নালকে ধরিয়া আনিয়া মসজিদে পাঠাইয়া দিব। যদি সে আমার নামে খোৎবা পড়িতে অস্বীকার করে, রাজাজ্ঞা অমান্য করা অপরাধে তখনই উহার প্রাণবিনাশ করিব।”

 জুম্মাবার উপস্থিত। নির্ধারিত সময়ের পূর্ব্বেই মোহাম্মদীয়গণ প্রাণের ভয়ে উপাসনামন্দিরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। জয়নাল আবেদীনের নিকটে যাইয়া মারওয়ান বলিল, “আজ তোমাকে মজিদে খোৎবা পড়িতে হইবে।”

 জয়নাল বলিলেন, “আমি প্রস্তুত আছি। ইমামদিগের কার্য্যই উপাসনায় অগ্রবর্তী হওয়া, খোৎবা পাঠ, ধর্ম্মের আলোচনা, শিষ্যদিগকে উপদেশ দান;—সুতরাং ঐ সকল আমার কর্তব্য কার্য্য। তুমি অপেক্ষা কর, আমি আমার মায়ের অনুমতি লইয়া আসি।”

 “তোমার মা’র অনুমতি লইতেই যদি চলিলে, আর একটি কথা শুনিয়া যাও।”

 “কি কথা?”

 খোৎবা পড়িতে হইবে বটে, কিন্তু তোমার নামে পড়িতে পারিবে না।”