পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৮৬

সিংহাসনে একজন উপযুক্ত লোককে বসাইয়া তাঁহার অধীনতা স্বীকার করাই যুক্তিসঙ্গত। প্রবল তরঙ্গমধ্যে শিক্ষিত কর্ণধার বিহনে যেমন তরী রক্ষা করা কঠিন, রাষ্ট্র-বিপ্লবের মত মহা বিপদে একজন ক্ষমতাশালী অধিনায়ক না হইলে রাজ্য রক্ষা করাও সেইরূপ মহা কঠিন। স্ব স্ব প্রাধান্যে কোন কার্য্যেরই প্রতুল নাই।”

 সমাগত দলমধ্যে এক জন বলিয়া উঠিলেন, “কাহার অধীনতা স্বীকার করিব? পথের লোক ধরিয়া কি মদিনার সিংহাসনে বসাইতে ইচ্ছা করেন? মদিনাবাসীরা কোন্ অপরিচিত নীচবংশীয় লোকের নিকট নতশিরে দণ্ডায়মান হইবে? প্রভু মোহাম্মদের বংশে ত এমন কেহই নাই যে, তাঁহাকে সিংহাসনে বসাইয়া জন্মভূমির গৌরব রক্ষা করিব।”

 প্রথম বক্তা বলিলেন: “কোন চিন্তা নাই, মোহাম্মদ হানিফা এখনও বর্ত্তমান আছেন। হোসেনের পর তিনিই আমাদের পূজ্য, তিনিই রাজা। ইহার পর হোসেনের বৈমাত্র ভ্রাতাও অনেক আছেন। কারবালার এই লোমহর্ষণ ঘটনা শুনিয়া তাঁহারা কি স্ব স্ব সিংহাসনে বসিয়া থাকিবেন? ইহার পর নূরনবী মোহাম্মদের ভক্ত রাজাও অনেক আছেন; এই সকল ঘটনা তাঁহাদের কর্ণগোচর হইলে তাহারাই কি নিশ্চিন্ত থাকিবেন? এজিদ ভাবিয়াছে কি? সে মনে করিয়াছে যে, হোসেন-বংশ নির্ব্বংশ করিয়াছে, সুতরাং এখন নিশ্চিন্তে থাকিবে! তাহা কখনই ঘটিবে না, চতুর্দ্দিক হইতে সমরানল জ্বলিয়া উঠিবে। আমরা এখনই উপযুক্ত একজন কাসেদকে হানুফা নগরে প্রেরণ করিব। আপাততঃ মোহাম্মদ হানিফাকে সিংহাসনে বসাইয়া, যদি জয়নাল আবেদীন প্রাণে বাঁচিয়া থাকেন, তবে তাঁহার উদ্ধারের উপায় করিব। সঙ্গে সঙ্গে এজিদের দর্প চূর্ণ করিতেও সকলে আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।”

 সকলেই এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। তখনই হানুফা নগরে কাসেদ প্রেরিত হইল।

 প্রথম বক্তা পুনরায় বলিলেন, “মোহাম্মদ হানিফা মদিনায় না আসা পর্য্যন্ত আমরা কিছুই করিব না। শোক-বস্ত্র যাহা এক্ষণে ধারণ করিয়াছি,