পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯১
উদ্ধার পর্ব্ব—নবম প্রবাহ

এখন কেহ দুঃখিত হইবেন না। এখন ধর্ম্মরক্ষা, মদিনার সিংহাসন রক্ষা, এজিদের বধ, হোসেন-পরিজনের উদ্ধার,—এই সকল কথাই যেন জপমালার মন্ত্র হয়। এইক্ষণে কেহ চক্ষের জল ফেলিবেন না। কাঁদিবার দিনে সকলে একত্র হইয়া কাঁদিব। শুধু আমরা কয়েকজনেই যে কাঁদিব, তাহা নহে; জগৎ কাঁদিবে। এ জগৎ চিরদিন কাঁদিবে। স্বর্গীয় দূত এস রাফিল জীবের জীবন-লীলা শেষ করিতে যে দিন ঘোর নাদে শিঙ্গা বাজাইয়া জগৎ সংহার করিবেন, সে দিন পর্য্যন্ত জগৎ কাঁদিবে। দুঃখ করিবার দিন ধরা রহিল; এখন অস্ত্র ধরুন, শত্রু বিনাশ করুন—মোহাম্মদীয় দিন, ঐ শিঙ্গাবাদন দিন পর্য্যন্ত অক্ষয়রূপে স্থায়িত্বের উপায় বিধান করুন। আবদুর রহ্‌মান। এ সকল কথা লিখিতে কখনও ভুলিও না।”

 গাজী রহ্‌মান প্রভুর আদেশ মত “শাহীনামা” পত্র, যাহা যাহার নিকট উপযুক্ত, তখনই লিখাইতে আরম্ভ করিলেন। সৈন্যগণ ক্রমে ক্রমে আসিয়া জুটিল। মন্ত্রীপ্রবর রাজাদেশে সকল শ্রেণীর প্রধান প্রধান অধ্যক্ষগণকে সমস্ত বিবরণ জ্ঞাপন করিলেন। নির্দ্দিষ্ট স্থানে কাসেদসকল প্রেরিত হইল। সকলে আবার গমনে অগ্রসর হইলেন। এক দিন প্রেরিত গুপ্তচর ও সন্ধানী লোকদিগের সহিত তাঁহাদের দেখা হইল। বিস্তৃত বিবরণ অবগত হইয়া পুনরায় তাঁহারা যাইতে লাগিলেন। নির্দ্দিষ্ট স্থান অতি নিকট; উৎসাহে গমনবেগ বৃদ্ধি করা হইল।

নবম প্রবাহ

 ওত বে অলীদ সৈন্যগণসহ মদিনা-প্রবেশপথের প্রান্তরে হানিফার অপেক্ষায় রহিয়াছ। একদা সায়াহ্নকালে একজন অনুচরসহ নিকটস্থ শৈলশিখরে বায়ু-সেবন আশায় সজ্জিত বেশে সে বহির্গত হইল। পাঠক! যেখানে মায়মুনার সহিত মারওয়ান নিশীথ সময়ে কথা কহিয়াছিল—এই-ই সেই পর্ব্বত। হোসেনের তরবারির চাকচিক্য দেখিয়া যে পর্ব্বতের