পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৯
উদ্ধার পর্ব্ব—দ্বাদশ প্রবাহ

আপন লাভ—ইত্যাদি অনেক বাদানুবাদের পর সৈন্যাধ্যক্ষ নীরব হইলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি বলিলেন, “বিশ্বাস কি?”

 সীমার বলিল, “অগ্রে হস্তগত, পরে ধৃত, শেষে শিবির-ত্যাগ, আবার তাহার পরেই পদ লাভ। আপনার কথাও শুনিলাম। আমার চিরব্রত হিত কথাও শুনাইলাম। এখন ভাবিয়া দেখুন, লাভালাভ কি?”

 “তাহা ত বটে, কিন্তু শেষে একূল ওকূল-দু’কূল না যায়।”

 “না—না, দুই কুল যাইবার কথা কি? সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। বিশ্বাস না হয়, আমিই অগ্রে বিশ্বাসস্থাপন করি। সন্ধ্যার পর একটু ঘোর ঘোর অন্ধকার হইলে আপনি এই নির্দ্দিষ্ট স্থানে আসিবেন। যে কথা, সেই-ই কাজ। হস্তগত হইলেও কি আপনার মনের সন্দেহ দূর হইবে না?”

 “সে ত বটে, সে কথা ত বটে; কিন্তু শেষে কি ঘটে বলিতে পারি না।”

 “আর কি ঘটিবে। আপনারাই সব, আপনারাই বাহুবল!”

 “যাহা হউক, আপনি কৌশল করিয়া ত আমার মন পরীক্ষা করিতেছেন না?”

 “যদি তাহাই বিবেচনা করেন, তবে আপনিই ঠকিলেন। আমি এখন আর কিছুই বলিব না। কেবলমাত্র এই বলিব যে, সন্ধ্যাদেবী ঘোম্‌টা টানিয়া জগৎ অন্ধকার করিলেই আপনাকে যেন এখানেই পাই। আমি বিদায় লইলাম।—নমস্কার।”

 “আপনি বিদায় লইলেন বটে, কিন্তু আমার মনে অশান্তির বীজ রোপণ করিয়া গেলেন।”

 সীমার ত্রস্তপদে আর এক পথে স্বসৈন্যমধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। সেনাপতি মহোদয়ও অতি মৃদু মৃদু ভাবে পদ বিক্ষেপ করিতে করিতে শিবিরে আসিলেন; প্রহরীদ্বয়ও পরে শিবিরে আসিল। ধিক্ রে তুর্কী সেনাপতি! ধিক্ রে অর্থ!!