পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৫
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রয়ােদশ প্রবাহ

কাক্কা সে দিকে দৃকপাতও করিলেন না; কেবল মুখে বলিলেন, “সীমার! তাের সঙ্গে যুদ্ধের রীতি কি? তাের সঙ্গে কথা কি? তুই কোথায়? শীঘ্র আসিয়া আমার তরবারির নীচে স্কন্ধ পাতিয়া দে! তােকে পাইলেই আমি যুদ্ধে ক্ষান্ত হই, তাের সৈন্যগণের প্রাণবধ করিতে বিরত হই। তুই কেন গােপনভাবে আছিস্? তুই নিশ্চয়ই জানিস্, আজ তাের নিস্তার নাই। এই অশ্বচক্রমধ্যে তাের প্রাণ, তাের সৈন্যসামন্ত—সকলেরই প্রাণ বাঁধা রহিয়াছে। একটি প্রাণীও এ চক্র ভেদ করিয়া যাইতে পারিবে না। নিশ্চয় জানি, তােদের সকলের জীবন আমাদের তরবারির তেজের উপর নির্ভর করিতেছে। তুই সেই সীমার! আবার আজকাল ‘মহাবীর সীমার’ নামে পরিচিত! শুনিলাম, তুই নাকি এজিদের সেনাপতি? তোর আত্মগােপন কি শােভা পায়? ছিঃ ছিঃ, সেনাপতির নাম ডুবাইলি। ‘মহাবীর’ নামে কলঙ্ক রটাইলি! তাের অধীনস্থ সৈন্যগণের নিকট অপদস্থ হইলি! ভীরু ও কাপুরুষের পরিচয় প্রদান করিলি! নিজেও মজিলি, অপরকেও মজাইলি! তাের শুভ্র নিশানে ভুলিব না; তুই গত কল্য যাহা করিয়াছিস্, তাহাতে সন্ধির প্রস্তাব আর কর্ণে শুনিব না। তাের কোন প্রার্থনাই গ্রাহ্য করিব না। তুই যে খেলা খেলিয়াছিস্, যে আগুন জ্বালাইয়াছিস্, তাহার ফল চক্ষের উপর রহিয়াছে, —এখনও জ্বলিতেছে, এখনও পুড়িতেছে। তুই অনেক প্রকারের খেলা খেলিয়াছিস্! কি ধূর্ত্ত! পরকালের পথও একেবারে নিষ্কণ্টক করিয়া রাখিয়াছিস্? তাের চিন্তা কি? তোর মরণে ভয় কি? জােগান ও তুর্কী ভূপতিদ্বয়ের যে দশা ঘটিয়াছে, ইহা তাঁহাদের ভ্রম নহে। বিশ্বাসী না হইলে বিশ্বাসঘাতকতা করিবার সাধ্য কাহার? আমি নিশ্চয় বলিতেছি, তাের জীবন-প্রদীপ নির্ব্বাণ না করিলে আমার অন্তরের জ্বালা নিবারণ হইবে না।”

 কাক্কা কথা কহিতেছেন, এদিকে সীমারের সৈন্যদল বাত্যাহত কদলীর ন্যায় কাক্কার সৈন্যহস্তে পতিত হইতেছে,—কথাটি বলিবার অবসর পাইতেছে না, নিঃশব্দে রক্তমাখা হইয়া ভূতলে পড়িতেছে। সীমার কোনও চাতুরী করিয়া আর উদ্ধারের পথ আবিষ্কার করিতে পারিল না। বহু চিন্তার পর সে