পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৭
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

 গাজী রহ্‌মান এ পর্য্যন্ত নিশানের প্রতি লক্ষ্য করেন নাই। অলীদের কথায় নিশানের প্রতি চাহিয়াই ঈশ্বরকে শত শত ধন্যবাদ দিলেন। এদিকে অলীদও ভয়ে বিহ্বলপ্রায় হইয়া অশ্ব ছুটাইয়া শিবিরাভিমুখে চলিয়া গেল।

 মোহাম্মদ হানিফা গাজী রহমানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহার কারণ কি? নিশান দেখিয়া অলীদের মুখ ভারী হইল কেন? ওরূপ দ্রুতবেগে সে হঠাৎ শিবিরেই বা চলিয়া গেল কেন?”

 “বাদশাহ্-নামদার! অলীদের বাজনার ধূমে আমি আমার চিন্তাকে ভ্রমপূর্ণ বিপথে চালনা করিয়াছিলাম। অনিশ্চয়তা, সন্দেহ, অনুমান প্রভৃতির উপর নির্ভর করিয়া যে কার্য্য করে, তাহাকে বাতুল ভিন্ন আর কি বলিব? আরও অধিক আশ্চর্য্য যে, একজন সেনাপতি এইরূপ করিয়াছেন। অলীদ যে কি প্রকৃতির সেনাপতি, তাহা আমি এখনও বুঝিতে পারি না। কি গুণে এত অধিক সৈন্যের অধিনায়ক হইয়া সে প্রকাশ্য যুদ্ধে অগ্রসর হইয়াছে, তাহা এখনও বুঝিতে পারিতেছি না। অলীদের প্রতি আমার কিছুই ভক্তি নাই। আমি আরও আশ্চর্য্যান্বিত হইতেছি যে, ইহারা কি প্রকারে মহাবীর হাসান-হোসেনের সহিত যুদ্ধ করিয়াছে! একটু অপেক্ষা করুন, সকলি দেখিতে পাইবেন।”

 “আমারও সন্দেহ হইতেছে। ঐ সকল চিহ্নিত পতাকা কখনই এজিদের নহে।”

 “বাদশাহ্-নামদার! অলীদ আমাকে ভ্রম-কূপে ডুবাইয়াছে, এখন আর কিছুই বলিব না—সকলই ঈশ্বরের মহিমা।”

 এদিকে রণপ্রাঙ্গণে অলীদ-পক্ষীয় সৈন্য তিষ্ঠিতে পারিতেছে না, বাত্যাহত কদলী বৃক্ষের ন্যায় ভূমিসাৎ হইতেছে। পূর্ব্বে একদল হত হইলেই যে অন্য দল আসিয়া শূন্য স্থান পূর্ণ করিতেছিল, এখন তাহা আর হইতেছে না। যাহারা সমরে লিপ্ত ছিল, তাহারা ক্রমেই ক্ষয় পাইতে লাগিল।

 সন্দেহ দূর হইল। মোহাম্মদ হানিফার সৈন্যগণ জাতীয় পতাকা স্পষ্টভাবে দেখিয়া সজোরে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিয়া প্রান্তরের সহিত রণস্থলও কাঁপাইয়া তুলিল। দেখিতে দেখিতে মস্‌হাব কাক্কা সৈন্যসহ আসিয়া হানিফার