পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪১
উদ্ধার পর্ব্ব—অষ্টাদশ প্রবাহ

 “অবশ্যই দেখিতে পারেন—বিলম্বে।”

 “কথা অনেক শুনিলাম, তুমি অদ্যই পঞ্চদশ সহস্র সৈন্য লইয়া অলীদের সাহায্যের এবং সীমারের উদ্ধারের জন্য গমন কর,—এই আমার আজ্ঞা।”

 এই আজ্ঞা করিয়া এজিদ রোষভরে মন্ত্রণাগৃহ হইতে উঠিয়া চলিয়া গেলেন।

 মারওয়ান বলিতে লাগিল, “দুর্ম্মতির লক্ষণ এই, যেখানে উচিত কথা সেইখানেই রোষ। যাহা হউক, আমি এখনই যাত্রা করিব, সীমারের উদ্ধার যাহা হইবার, বোধ হয় এতদিনে হইয়া গিয়াছে, অলীদের উদ্ধার হয় কিনা তাহাই সন্দেহ।”

অষ্টাদশ প্রবাহ

 কি মর্ম্মভেদী দৃশ্য! কি হৃদয়বিদারক বিষাদ ভাব! কাহারও মুখে কথা নাই, হর্ষের চিহ্ন নাই, যুদ্ধ-জয়ের নাম নাই, সীমার-বধের প্রসঙ্গ নাই, অলীদ-পরাজয়ের আলোচনা নাই।—রাজার রাজবেশ-শূন্য, শির শিরস্ত্রাণশূন্য, পদ পাদুকাশূন্য,—পরিধেয় নীলবাস, বিষাদ-চিহ্ন নীলবাস! সৈন্যদলে বাজনা বাজিতেছে না, তুরীডঙ্কার আর শব্দ হইতেছে না, ‘নকীব’ উষ্ট্রপৃষ্ঠে বসিয়া ভেরীরবে ভূপতিগণের শুভাগমন-বার্ত্তা আর যোষণা করিতেছে না। সকলেই পদব্রজে, সকলেরই ম্লানমুখ, সকলেই নীরব। তীর তুণীরে, তরবারি কোষে, খঞ্জর পিধানে, সকলের চক্ষুই জলে পরিপূর্ণ। কারুকার্য্যখচিত সুন্দর নিশান-স্থানে আজ নীল নিশান। হানিফা সসৈন্যে রাজপথে—পুণ্যভূমি মদিনা নগরের রাজপথে। নগরের উচ্চ উচ্চ প্রাসাদে, অত্যুচ্চ মঞ্চে, সিংহদ্বারে, নানা স্থানে অনন্ত শোক-প্রকাশক নীল পতাকাসকল বায়ু তাড়িত হইয়া অনন্ত নীলাকাশে মিশিয়া হোসেনজনিত অনন্ত শোক কাঁপিয়া কাঁপিয়া প্রকাশ করিতেছে। যে দিকে দৃক্‌পাত কর, সেই দিকেই শোকের চিহ্ন-বিষাদের রেখা। হোসেন-শোকে মদিনার এই দশা। এ দশা কে করিল? এ অন্তর্ভেদী দুর্দ্দশা কে ঘটাইল? মর্ত্ত্যে, শূন্য়ে, আকাশে,