পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৫০

নিতান্তপক্ষে উহারা আসিয়া পড়ে, তখন দামেস্ক-নগর নিকটস্থ প্রান্তরে আবার ডঙ্কা বাজাইয়া নিশান উড়াইয়া ফিরিয়া দাঁড়াইব। এক্ষণে আর কিছুই নহে; প্রস্থান—ত্রস্তে প্রস্থান।”

 “উহারা যে বিক্রমে আসিতেছে, আমরা যে উহাদের অগ্রে দামেস্কে যাইতে পারিব, তাহাতেও অনেক সন্দেহ! আপন রাজ্যে দ্বিগুণ বল, যেখানেই ‘ধর ধর’ সেইখানেই ‘মার মার’। ঐ দেখ, উহারাও গমনে ক্ষান্ত হইয়াছে। না জানিয়া বিশেষ তত্ত্ব না লইয়া, কেন অগ্রসর হইবে? আমাদের সন্ধান না লইতে লইতেই আমরা এ স্থান হইতে চলিয়া যাই। আর কথা নাই ভাই! প্রস্থান—শীঘ্র প্রস্থান!”

 তখনই শিবির-ভঙ্গের আদেশ হইল, লোহিত পাতাকা নীচে নামিল। মুহূর্ত্তমধ্যে শিবির ভঙ্গ করিয়া মারওয়ান ও অলীদ সৈন্যগণসহ দামেস্কাভিমুখে বেগে ধাবিত হইল।

 ওদিকে গাজী রহমান মহাচিন্তায় পড়িয়াছেন। ওই লোহিত নিশান উড়িতে উড়িতে কোথায় উড়িয়া গেল? দেখিতে দেখিতে উহাদের শিবিরও ভগ্ন হইল!—লোকজনও সরিতে লাগিল। ক্রমে উহারা ঈষৎ দৃষ্টিগোচর হইতে লাগিল, ক্রমেই দৃষ্টির অগোচর হইল।

 মোহাম্মদ হানিফা গাজী রহমানকে বলিলেন, “আর চিন্তা কেন, পৃষ্ঠ দেখাইয়া যখন পলাইয়া গেল, তখন আর সন্দেহ কি? পলায়িত ব্যক্তির পরিচয় নিষ্প্রয়োজন, আজ এই স্থানেই বিশ্রাম।”

 “তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু বিশেষ সতর্কভাবে থাকিতে হইবে। তাহারা পলাইল বলিয়া নিশ্চিন্তে থাকিতে পারি না। গুপ্তচরদিগকে কয়েক জন চতুর সৈন্যসহ সন্ধানে পাঠাইতেছি। সন্ধান করিয়া জানিয়া আসুক,—উহারা কে? কেন শিবির স্থাপন করিয়াছিল? কেনই বা চলিয়া গেল?”

 “ও ত ওতবে অলীদের শিবির নহে?”

 “না না; অলীদের শিবিরের অত জাঁকজমক কোথায়?”

 “তবে কে?”

 “সেই ত সন্দেহ, এখনই জানিতে পারিবে।”