পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১
মহরম পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

পথিকের পক্ষে বরং সহজ, অপরিচিত ভিন্ন দেশীয় পথিকের পক্ষে এই মরুস্থানে ভ্রমণ করা নিতান্তই দুঃসাধ্য। এ পথিক দেশীয় এবং পরিচিত। দামেস্ক হইতে যাত্রা করিয়াছেন। কোথায় কোন পর্ব্বত, কোথায় কোন্ নির্ঝরিণীর জল পরিস্কার ও পানোপযােগী, তাহাও পূর্ব্ব হইতে তাহার জানা আছে। পথিক একটি ক্ষুদ্র পর্ব্বত লক্ষ্য করিয়া তদভিমুখে যাইতেছেন। কয়েক দিন পর্য্যন্ত অবিশ্রান্ত চলিয়া এক্ষণে অনেক দুর্ব্বল হইয়া অতিকষ্টে যাইতেছেন। নির্দ্দিষ্ট পর্ব্বতের নিকটস্থ হইলে পূর্ব্ব-পরিচিত আক্কাস ও তৎসহ কয়েকজন অনুচরের সহিত তাঁহার দেখা হইল।

 মােস্‌লমকে দেখিয়া আক্কাস্‌ জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভাই মােস্‌লেম! কোথায় যাইতেছ?”

 মােস্‌লেম উত্তর করিলেন, “পিপাসায় বড়ই কাতর, অগ্রে পিপাসা নিবৃত্তি করি, পরে আপনার কথার উত্তর দিতেছি।”

 আক্কাস্ বলিলেন, “জল অতি নিকটেই আছে। ঐ কয়েকটী খর্জ্জুরবৃক্ষের নিকট দিয়া সুশীতল নির্ঝরিণী অতি মৃদু মৃদুভাবে বহিয়া যাইতেছে। চল, ঐ খর্জ্জুর-বৃক্ষতলে সকলেই বসিয়া একটু বিশ্রাম করি। আমিও কয়েকদিন পর্য্যন্ত অত্যন্ত ক্লান্ত হইতেছি।”

 সকলে একত্র হইয়া সেই নির্দিষ্ট খর্জ্জুর-বৃক্ষতলে উপবেশন করিলেন। আক্কাস একখণ্ড প্রস্তর ভূমি হইতে উঠাইয়া তত্তলস্থ ঝর্ণার সুস্নিগ্ধ জলে জলপাত্র পূর্ণ করিয়া এবং থলিয়া হইতে কতক গুলি খাের্‌মা বাহির করিয়া মােসলেমের সম্মুখে রাখিয়া দিলেন। মােসলেম প্রথমে জল পান করিয়া কথঞ্চিৎ সুস্থ হইলেন। দুইটি খাের্‌ম। মুখে দিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভাই আক্কাস্! এজিদের বিবাহ-পয়গাম (প্রস্তাব) লইয়া জয়নাবের ভবনে যাত্রা করিতেছি।”

 আক্কাস্‌ বলিলেন, “সে কি! আবদুল জব্বার কি মরিয়াছে?”

 মােস্‌লেম বলিলেন,—না আবদুল জব্বার মরেন নাই। জয়নাবকে তালাক দিয়াছেন।”

 আক্কাস্‌ বলিলেন,—“আহা, এমন সুন্দরী স্ত্রীকে কি দোষে পরিত্যাগ