পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৩
উদ্ধার পর্ব্ব—দ্বাবিংশ প্রবাহ

রহ্‌মানের নির্দ্দিষ্ট স্থানটি মনােনীত করিয়া অশ্ব হইতে অবতরণ করিলেন। সৈন্য-সামন্ত, অশ্ব, উষ্ট্র ইত্যাদি ক্রমে আসিয়া জুটিতে লাগিল। বাসােপযােগী বস্ত্রাবাস নির্ম্মিত হইতে আরম্ভ হইল। গাজী রহ মানের আদেশে দক্ষিণে, বামে, সম্মুখে সীমা নির্দ্দিষ্ট করিয়া তখনই সামরিক নিশান উড়িতে লাগিল। মারওয়ানের চিন্তা বিফল হইল। সমর-ক্ষেত্র—উভয় দলের সম্মুখস্থ ক্ষেত্র। এজিদ পক্ষেও যুদ্ধ-নিশান উড়িল, শিবির-নির্ম্মাণেও ত্রুটি হইল না— প্রভাতেই যুদ্ধ!

দ্বাবিংশ প্রবাহ

 নিশার অবসান না হইতেই উভয় দলের রণবাদ্য বাজিতে লাগিল। এক পক্ষে হানিফার প্রাণবিনাশ, অপর পক্ষে এজিদের পরমায়ুর শেষ, দুই দলের এই দুই প্রকার আশা। দামেস্ক নগরবাসীরা কোন্ পক্ষের হিতৈষী, তাহা সহজে বুঝিবার সাধ্য নাই। কারণ, মােহাম্মদ হানিফার পক্ষে কেহ কোন কথা বলিলে, জয়নাল আবেদীনের জন্য কেহ দুঃখ করিলে, সে রাজদ্রোহী বলিয়া গণ্য হয়, কোতোয়ালের হস্তে তাহার প্রাণ যায়—তাই এ অবস্থায় সকলেই সন্তুষ্ট, সকলেই আনন্দিত। কেহ দূরে, কেহ অদূরে কেহ নগর-প্রাচীরে, কেহ কেহ উচ্চ বৃক্ষোপরি থাকিয়া উভয় দলের যুদ্ধ দেখিবার প্রয়াসী হইল। মােহাম্মদ হানিফার পক্ষ হইতে জনৈক আম্বাজী সৈন্য যুদ্ধার্থে রণ-প্রাঙ্গণে আসিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী না পাঠাইয়া উপায় নাই। মারওয়ান বাধ্য হইয়া বল্লকীয়া নামে জনৈক বীরকে আম্বাজীর মস্তক শিবিরে আনিতে আদেশ করিল। যেই আজ্ঞা—অমনি গমন। সকলেই দেখিল, উভয় বীর অস্ত্রচালনায় প্রবৃত্ত হইয়াছে, অস্ত্রে অস্ত্রে সংঘর্ষণে সময়ে সময়ে চঞ্চলা চপলাবৎ অগ্নিরেখা দেখা দিতেছে। অনেকক্ষণ যুদ্ধের পর আম্বাজী বল্লকীয়া-হস্তে পরাস্ত হইলেন। বিপক্ষ পরাভর স্বীকার করিলেও বল্লকীয়া অস্ত্র নিক্ষেপে ক্ষান্ত হইল না।—সকলেই