পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৬৬

স্বাধীনতা রক্ষা করিতে চাও, মহাবেগে হানিফাকে আক্রমণ কর। এমন সুযোগ আর হইবে না। তোমাদের বল-বিক্রমের ভালরূপ পরিচয় পাইলে হানিফা যুদ্ধক্ষেত্রে আর আসিবে না; নিশ্চয়ই পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিবে। যাও, শীঘ্র যাও, শীঘ্র হানিফার মস্তকচ্ছেদন করিয়া আন। তোমরাই আমার দক্ষিণ বাহু, তোমরাই আমার বল-বিক্রম, তোমরাই আমার সাহস, তোমরাই আমার প্রাণ। ঘোর বিক্রমে হানিফাকে আক্রমণ কর। হয় বন্ধন— নয় শিরশ্ছেদ,—এই দুইটি কার্য্যের একটি কার্য্য করিতে আজ জীবন-পণ কর। বীরগণ! বীরদর্পে চলিয়া যাও। তোমাদের পারিতোষিক আমার প্রাণ— মন—দেহ!—মণি, মুক্তা, হীরক ইত্যাদি ত তুচ্ছ কথা!”

 সৈন্যগণ অসিহস্তে ‘মার্ মার্’ শব্দে সমরাঙ্গণে যাইয়া হানিফাকে আক্রমণ করিল। এজিদের চক্ষু হানিফার দিকে। এজিদের তরবারি ক্ষণস্থায়ী বিদ্যুতের ন্যায় চাকচিক্য দেখাইয়া উর্দ্ধে, নিম্নে, বামে, দক্ষিণে ঘুরিল এবং লোহিত রেখায় তাহার পূর্ব্ব চাকচিক্য কিঞ্চিৎ মলিন ভাব ধারণ করিল। সম্মুখে একটি প্রাণীও নাই। চক্ষুর পলকে সৈন্যেরা যেন স্থির বায়ুর সহিত মিশিয়া অশ্বের সহিত অন্তর্হিত হইল।

 মারওয়ান বলিল,—“বাদশাহ্-নামদার। দেখিলেন, অলীদ সহজে মদিনার পথ ছাড়িয়া দেয় নাই। এই যে হানিফার অস্ত্র চলিল, আমরা পরাজয় স্বীকার না করিলে এ অস্ত্র আর থামিবে না,— দিবা-রাত্রি সমানভাবে চলিবে,—হানিফার মন কিছুতেই টলিবে না—রক্তের স্রোত রহিয়া দামেস্ক-প্রান্তর ডুবিয়া গেলেও সে বিশাল হস্তের বল কমিবে না-হস্ত অবশ হইবে না,—তাহার তরবারির তেজ কমিবে না, ক্লান্ত হইয়া সে শিবিরেও ফিরিয়া যাইবে না।”

 এজিদ রোষে জ্বলিতেছেন। পুনরায় তিনি পূর্ব্বপ্রেরিত সৈন্যের দ্বিগুণ সৈন্য হানিফা-বধে প্রেরণ করিলেন। সৈন্যগণ মহাবীরের সম্মুখে যাইয়া একত্র একযোগে নানাবিধ অস্ত্র নিক্ষেপ করিতে লাগিল। যে যেরূপ অস্ত্র নিক্ষেপ করিল, ঈশ্বরের ইচ্ছায় হানিফা তাহাকে সেই অস্ত্রেই যমপুরী পাঠাইয়া দিলেন। এজিদের ক্রোধের সীমা রহিল না। পুনরায় তিনি চতুর্গুণ