পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৬৮

ধরিয়াছিলাম, যে আশায় দুল্‌দুল্‌কে কশাঘাত করিয়াছিলাম, তাহা আমার সফল হয় নাই। বিপক্ষদল আমাকে বড়ই অপ্রস্তুত করিয়াছে। আমি মনে করিয়াছিলাম, যুদ্ধ শেষ না করিয়া আর তরবারি কোষে আবদ্ধ করিব না,—শিবির হইতে যে বাহির হইয়াছি, আর শিবিরে যাইব না, আজ প্রথম—আজই শেষ। শুনিয়াছি, বিশেষ সন্ধানে জানয়াছি—এজিদ স্বয়ং যুদ্ধে আসিয়াছে। যুদ্ধ-সময়েই হউক, কি যুদ্ধ-শেষেই হউক, অবশ্যই এজিদকে হাতে পাইতাম। আমার চক্ষে পড়িলে তাহার জীবন কালই শেষ হইত। এজিদ হোসেনের মস্তক কারবালা হইতে দামেস্কে আনাইয়াছিল। আমি তাহার মস্তক হস্তে করিয়া দামেস্কবাসীদিগকে দেখাইতে দেখাইতে বন্দীগৃহে যাইয়া জয়নালের সম্মুখে ধরিতাম, কিন্তু আমার মনের আশা মনেই রহিল। কি করি, বাধ্য হইয়া গত কল্য যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়াছি। আজ তুমি যাইবে,—যাও ভাই! তোমাকে ঈশ্বরে সঁপিলাম। দয়াময়ের নাম করিয়া, নূরনবী মোহাম্মদের নাম করিয়া, ভক্তিভাবে পিতার চরণোদ্দেশে নমস্কার করিয়া তরবারি হস্তে কর। শত সহস্র বিধর্ম্মী বধ করিয়া জয়নাল-উদ্ধারের উপায় কর। তোমার তরবাবির তীক্ষ্ণধার আজ শত্রু শোণিতে রঞ্জিত হউক, এই আশীর্ব্বাদ করি। কিন্তু ভাই, এজিদের প্রতি অস্ত্রনিক্ষেপ করিও না। ক্রোধ বশতঃ ভ্রাতৃ-আজ্ঞা উপেক্ষা করিয়া মহাপাপকূপে ডুবিও না; সাবধান, আমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিও না।”

 ওমর আলী ভ্রাতৃ-উপদেশ শিরোধার্য্য করিয়া ভক্তিভাবে ভ্রাতৃপদ চুম্বন করিয়া হানিফার উপদেশ মত তরবারি হস্তে করিলেন। রণবাদ্য বাজিয়া উঠিল। সৈন্যগণ সমস্বরে ঈশ্বরের নাম ঘোষণা করিয়া ওমর আলীর জয় ঘোষণা করিল।

 মহাবীর ওমর আলী পুনরায় ঈশ্বরের নাম করিয়া অশ্বারোহণ করিলেন। বিদ্যুৎবেগে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতেই এজিদ পক্ষীয় বীর সোহ্‌রাব-জঙ্গ অশ্ব-দাপটের সহিত অসিচালনা করিতে করিতে উপস্থিত হইল। স্থিরভাবে ক্ষণকাল ওমর আলীর আপাদমস্তক লক্ষ্য করিয়া সে বলিল,—“তোমার নাম কি মোহাম্মদ হানিফা?”