পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৭
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

উপরোক্ত চক্রত্রয় ভিন্ন অন্য কোন চক্রে তাহারা যেন না যাইতে পারে— সে বিষয়ে বিশেষ সাবধান হইতে হইবে।”

 মারওয়ান এই সকল আদেশ করিয়া বন্দীসহ বধ্যভূমিতে যাইতে উদ্যত হইল। বন্দী ওমর আলী চতুর্দ্দিকে চাহিয়া বধ্যভূমিতে যাইতে অসম্মত হইলেন।

 মারওয়ান বলিল, “ওমর আলী! তুমি জানিয়া শুনিয়া বিহ্বল হইতেছে? বন্দী-দশায়ও রাজ-আজ্ঞা অবহেলা? তুমি স্বেচ্ছাপূর্ব্বক বধ্যভূমিতে না গেলে, আমি কি তোমাকে শূলে চড়াইয়া মারিতে পারিব না? তুমি এখনও যদি মহারাজ এজিদের বশ্যতা স্বীকার কর, প্রভু বলিয়া তাঁহাকে মান্য কর,—তোমার অপরাধ মার্জ্জনাহেতু জোড়করে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তবে এখনও তোমার প্রাণরক্ষা হইতে পারে। আমি মহারাজের রোষাগ্নি নির্ব্বাণ করিতে চেষ্টা করিব। বধ্যভূমিতে যাইবে না,এ কি কথা? সাধ্য কি যে, তুমি না যাইয়া পার? তোমাকে নিশ্চয়ই ঐ শূলদণ্ডের নিকটে যাইতে হইবে,—নিশ্চয়ই ঐ শূলে আরোহণ করিতে হইবে,—বিদ্ধ হইতে হইবে,—মরিতে হইবে। মহারাজ এজিদের আজ্ঞা অলঙ্ক্ষনীয়।”

 ওমর আলী বলিলেন, “তুমি যদি আমাকে লইয়া যাইতে পার, লইয়া যাও,—শূলে দাও। কিন্তু আমি ইচ্ছাপূর্ব্বক শূলদণ্ডের নিকট যাইব না, শূলে আরোহণ করা ত দূরের কথা। আমার প্রাণবধ করাই ত তোমাদের ইচ্ছা; তরবারি আছে, আঘাত কর —তীর আছে, বক্ষোপরি লক্ষ্য কর—বর্শা আছে, বিদ্ধ কর—গদা আছে, মস্তক চুর্ণ কর—ফাঁস আছে, গলায় দিয়া শ্বাস বন্ধ কর—যে প্রকারে ইচ্ছা হয়, প্রাণ বাহির কর। আমি শূলে চড়িব না।”

 “আমি তোমাকে শূলেই চড়াইব; মহারাজ এজিদের আজ্ঞা প্রতিপালন করিব। তুমি তোমার প্রাণ বাহির করিবার দশটি উপায় বাহির করিলেও তাহা গ্রাহ্য হইবে না। ঐ একমাত্র শূলদণ্ডেই তোমার জীবন শেষ—কেন আমাকে বিরক্ত কর?”

 “তোমার ক্ষমতা থাকে তো আমাকে লইয়া যাও।”