বৃথা। কোন উপায়ে, কি কোন কৌশলে, কোন সুযোগে জয়নালের কোন সন্ধান জানিতে পারিলে এখনও রক্ষার অনেক উপায় করা যায়। মদিনায় মায়মুনায় আবাসে কত নিশীথ সময়ে ছদ্মবেশে যাইয়া কত গুপ্ততথ্য অনুসন্ধান করিয়াছি, কত অসাধ্য সাধন সহজে সাধন করিয়াছি, আর এ দামেস্ক নগর—আপন দেশ, নিজের অধিকার, এখানে কিছুই করিতে পারি না। তবে একটা কথা,—পাত্রভেদে কিছু লঘু-গুরু আছে। আবার একেবারে নিঃসন্দেহের কথাও নহে। মোহাম্মদ হানিফা বুদ্ধিমান। প্রধান মন্ত্রী গাজী রহ্মান অদ্বিতীয় রাজনীতিজ্ঞ, চিন্তাশীল ও চতুর, তাহাদের নিকট মারওয়ান পরাস্ত। কি জানি, কি কৌশল করিয়া শিবিররক্ষার কি উপায় তাহারা করিয়াছে! হঠাৎ বিপদগ্রস্ত হইলেও হইতে পারি! অদ্বিতীয় ভালবাসার প্রাণ—পাখীটাই যে, দেহপিঞ্জর হইতে একেবারে দূরে না যাইতে পারে, তাহাই বা কে বলিল? এও সন্দেহ; নতুবা দামেস্ক-প্রান্তরে এই নিশীথ সময়ে একা একা ভ্রমণ করিতে মারওয়ান সন্দিহান নহে, দামেস্কের রাজমন্ত্রী ভীত নহে।”
এই বলিয়া মারওয়ান আসন হইতে উঠিল। উঠিয়া একটু চিন্তা করিয়া বলিল, “একা যাইব না, অলীদকে সঙ্গে করিয়া ছদ্মবেশে—পথিক-সাজে—সামান্য পথিক-সাজে বাহির হইব।”
মারওয়ান বেশ-পরিবর্ত্তনের জন্য বস্ত্রাবাসমধ্যে প্রবেশ করিল।
অলীদের চক্ষেও আজ নিদ্রা নাই। মহাবীর-হৃদয় আজ মহাচিন্তায় অস্থির। এ যুদ্ধের পরিণাম-ফল কি? সমরের যে প্রকায় গতি দেখিতেছি, শেষ ঘটনায় নিয়তিদেবী যে কোন্ দৃশ্য দেখাইয়া এ অভিনয়ের যবনিকা পতন করিবেন, তা তিনিই জানেন।
বীরবর শিবিরের বাহিরে পদচারণা করিয়া বেড়াইতেছে, আর ভাবিতেছে— মাঝে মাঝে বিমানে পরিশোভিত তারাদলের মিটি মিটি ভাব দেখিয়া মনে মনে আর একটি মহাভাবের ভাবনা ভাবিতেছে। কিন্তু সে ভাব—ক্ষণকালের জন্য সে জ্বলন্ত দৃঢ়ভাব তাহার হৃদয়ে স্থান পাইতেছে না। মায়াময় সংসারে স্বার্থপূর্ণ ভাবই প্রবলবেগে তাহার হৃদয় অধিকার করিতেছে। নিশার শেষের