পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪১৮

 এজিদ বলিতেছন—সুরাপূর্ণ পেয়ালা হস্তে করিয়া বারবার পেয়ালায় দিকে চাহিতেছেন আর বলিতেছেন, “এ স্বর্গীয় সুর ধরাধামে কে আনিল? এ যন্ত্রণা-নিবারক, মনোদুঃখপহারক, মনস্তাপ-বিনাশক, প্রেমভাব-উত্তেজক, ভ্রাতৃভাব-সংস্থাপক, ষড়রিপু-সংহারক, নবরস-উদ্দীপক, দেহকাক্তি-পরিবর্দ্ধক, কণ্ঠস্বর-প্রকাশক—এই নবগুণবিশিষ্ট অমৃত ধরাধামে কে আনিল? মরি! মরি!! আহা মরি মরি!!! এ স্বর্গীয় অমৃত ধরাধামে কে আনিল? অহো করুণা! অহো দয়া। কথা বলিব,— মনের কথা বলিব, সত্য কথা বলিব?”

 পরিপূর্ণ পাত্র আবার মুখে উঠিল। সুরা গলাধঃ হইল, জ্বলিতে জ্বলিতে পাকযন্ত্র পর্য্যন্ত যাইল, তখনই শেষ— পাত্রের শেষ। এজিদ মত্ততায় অধীর হইয়া মনের কপাট খুলিয়া দিয়াছেন,—অকপটে মনের কথা প্রকাশ করিয়া দশ জনকে জানাইতেছেন: “আজ উচিত পথে চলিব। সীমার মরিয়াছে— ভালই হইয়াছে! বেশ হইয়াছে, (হস্তের উপর হস্ত সজোরে আঘাত করিয়া)— যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল পাইয়াছে। আমার শত্রু, (তেজের সহিত)—তা’র কি?—সীমারের কি?—রে পাষণ্ড সীমার। তোর কি?—তুই তাহার মাথা কাটিলি কেন?—যে ব্যক্তি টাকার লোভে মানুষের মাথা কাটে, তার ঘাড়ে কি মাথা থাকিবে?— পেয়ালার প্রতি চাহিয়া) তা’র মাথা কাটা পড়িবে না? জেয়াদ গিয়াছে, মন্দ কি? বিশ্বাসঘাতকের ঐরূপ শাস্তি হওয়াই উচিত, যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল। আগে পাপ ক’রেছে, পাছে ভূগেছে, শেষে জাহান্নামে গিয়েছে।—এজিদের কি? জেয়াদ বাহাদুরী করিয়া শত্রুর হস্তের বন্ধন খুলিয়া দেয় কেন? সে হাতে মরণ নাই,—সেই-ই পরম সৌভাগ্য। ও যে বাহ্‌রাম নয়, হানিফার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা—আক্কেল আলী! আবার পাত্র মুখে উঠিল, (নিঃশ্বাস ছাড়িয়া)—সৈন্যদের কথা—কিছুই নহে। বেতনভোগী চাকর, টাকা দিয়াছি, জীবন লইয়াছি। এজিদের জন্যই আমার মরণ—কেন জয়নাবকে এজিদ চক্ষু তুলিয়া দেখিল—কেন আবদুল জব্বারকে প্রতারণা করিল?কেন মাবিয়ায়