পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৩০

পড়িতে লাগিল। চক্ষের পলকে মারওয়ানের দেহ ধূলায় লুটাইয়া শোণিত ধারায় সভাতল রঞ্জিত করিল।

 মারওয়ান অস্ফুটস্বরে বলিল, “জয়নাল আবেদীন। আমি তোমার ভালও করিয়াছি—মন্দও করিয়াছি। আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইল। কিন্তু সম্মুখে মহা ভীষণ রূপ। এমন ভয়ঙ্কর মুর্ত্তি আমি কখনও দেখি নাই। আমাকে রক্ষা কর।”

 জয়নাল আবেদীন বলিলেন, “মারওয়ান! ঈশ্বরের নাম কর, এ সময়ে তিনি ভিন্ন রক্ষার ক্ষমতা আর কাহারও নাই। জ্বলন্ত বিশ্বাসের সহিত সেই দয়াময়ের নাম মুখে উচ্চারণ কর। তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”

 মারওয়ান আর্ত্তনাদ সহকারে বিকৃতস্বরে বলিল, “আমি মারওয়ান, আমি মারওয়ান, দামেস্ক-রাজমন্ত্রী মারওয়ান! আমাকে মারিও না, দোহাই তোমাদের, আমাকে মারিও না। অগ্নিময় লৌহদণ্ডে আমাকে আঘাত করিও না। আমি ও-অগ্নিসমুদ্রে প্রবেশ করিতে পারিব না। আমি মিনতি করিয়া দুখানি পায়ে ধরিয়া বলিতেছি, ও-অগ্নি-সমুদ্রে আমাকে নিক্ষেপ করিও না। দোহাই তোমাদের রক্ষা কর। দোহাই তোমাদের, আমাকে রক্ষা কর। আমি এজিদের প্রধান মন্ত্রী-আমাকে আর মারিও না। প্রাণ গেল! আমি যাইতেছি! ঐ আগুণে প্রবেশ করিতেছি,— রক্ষা কর।”

 বিকট চিৎকার করিতে করিতে মারওয়ানের প্রাণপাখী দেহ-পিঞ্জর হইতে অদৃশ্যভাবে উড়িয়া গেল। রক্তমাখা দেহ সভাতলে পড়িয়া রহিল। মোহাম্মদ হানিফা গাজী রহ্‌মান, ওমর আলী, মস্‌হাব কাক্কা প্রভৃতিকে বলিতে লাগিলেন, “ভ্রাতৃগণ। এখন আর চিন্তা কি? এখন প্রস্তুত হও। যাহার জন্য আমি এতদিন সঙ্কুচিত ছিলাম, যাহার জীবন আশঙ্কা করিয়া এতদিন নানা সন্দেহে সন্দিহান হইয়াছিলাম, আজ সে জীবনের জীবন—নয়নের পুত্তলি,—হৃদয়ের ধন—অমুল্য নিধি হস্তে আসিয়াছে। ঈশ্বর আজ তাহাকে আমাদের হস্তগত করাইয়াছেন, আর ভাবনা কি? এখনই প্রস্তুত হও। এখনই সজ্জিত হও। এখনই এজিদ-বধে যাত্রা