পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
মহরম পর্ব্ব—ষষ্ঠ প্রবাহ

 মােস্‌লেম বলিলেন, “জয়নাব! তুমিই জগতে পবিত্র কীর্ত্তি স্থাপন করিলে। জগৎ বিলয় পর্য্যন্ত তোমার এই অক্ষয় কীর্ত্তি সকলের অন্তরে দেদীপ্যমান থাকিবে। ধনসম্পত্তি-সুখবিলাসের প্রত্যাশিনী হইলে না, রূপমাধুরীতেও ভুলিলে না, কেবল অনন্তধামে অনন্ত সুখের প্রত্যাশাতেই দৃঢ় পণ করিয়া পার্থিব সুখকে তুচ্ছ জ্ঞান করিলে! আমি তোমাকে সহস্রবার অভিবাদন করি। আমার আর কোন কথা নাই। আমি বিদায় লইলাম।”

 মােস্‌লেম বিদায় লইলেন। যথাসময়ে প্রথমে এমাম হাসান পরে আক্কাসের নিকট সমুদয় বৃত্তান্ত জ্ঞাপন করিয়া, অপূর্ব্ব চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া, তিনি দামেস্কাভিমুখে যাত্রা করিলেন।

ষষ্ঠ প্রবাহ

 মােস্‌লেমকে জয়নাবের নিকট পাঠাইয়া এজিদ প্রত্যহ দিন গণনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার গণনা-অনুসারে যে দিন মোস্‌লেমের প্রত্যাগমন সম্ভব, সে দিন চলিয়া গেল। মােস্‌লেমের আগমন-প্রতীক্ষায় এজিদ সূর্য্যাস্তের কামনা করিয়া সন্ধ্যাদেবীর প্রতীক্ষায় ছিলেন। তমোময়ী সন্ধ্যাও দিবাকরের অস্তাচল-গমনের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিলেন। কিন্তু এজিদ মোস্‌লেমকে দেখিতে পাইলেন না। তাহার পর ক্রমে সপ্তাহ যায়, মােস্‌লেমের সংবাদ নাই। যে পথ অতি কষ্টে এক দিনে অতিক্রম করা যায়, সে পথ এজিদ মনঃকল্পিত গণনায় অর্দ্ধ দিনে আনিয়া, মােস্‌লেমের প্রত্যাগমন সম্ভব স্থির করিয়া যে অশ্বিস্ত হইয়াছিলেন, সে তাঁহার ভ্রম নহে। কারণ, প্রণয়াকাঙক্ষীর প্রাণ আকাঙ্ক্ষিত প্রণয়রত্ন লাভের সুসংবাদ শুনিতে অমূল্য সময়কে যত শীঘ্র হয় দূর করিয়া এক দিনে দুই তিন বার সূর্য্যকে উদয়-অস্ত করাইতে ইচ্ছা করে। আবার সুখসময়ের দীর্ঘতার জন্য অনেকে অনেক সময় লালায়িত হয় ল্যাপল্যাণ্ডবাসীকে সহস্রবার ধন্যবাদ দেয়। ইহা চিরকালই প্রসিদ্ধি আছে যে, সুখসূর্য্য শীঘ্রই অস্তমিত হয়, সুখনিশি শীঘ্র শীঘ্র ঊষাকে আমন্ত্রণ করিয়া প্রভাতকে আনয়ন করে। সুখী দুঃখী, পরস্পর সকলেরই আক্ষেপ এবং