পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৫৮

করিতেছিলেন। কাক্কার দল আসিয়া জুটিলেই—“জয় মদিনার ভূপতির জয়! জয় মহারাজ জয়নাল আবেদীনের জয়!” ঘোষণা করিতে করিতে সকলে বীরদর্পে নগরে প্রবেশ করিলেন। কার সাধ্য বাধা দেয়। কে মাথা উঠাইয়া সেই বীরগণের সম্মুখে বক্ষ বিস্তারে দণ্ডায়মান হয়? কাহার সাধ্য একটি কথাও কহিয়া সরিয়া যায়। জনপ্রাণী দ্বারে নাই। রাজপথেও কোন লোক কোন স্থানে কোন কার্য্যে নিয়োজিত নাই। পথ পরিষ্কার—জনতা, কোলাহলের নামমাত্র নাই। কেবল স্বদল মধ্যে, মধ্যে মধ্যে ‘মার্ মার্’ ‘কাট্ কাট্’ শব্দ—“জয় জয়নাল আবেদীন! “জয় মোহাম্মদ হানিফা!” রব,—আর বহু দূরে লোকের প্রাণভয়ে পলায়নের কোলাহল-আভাস। শত্রু-হস্তে ধন, মান, প্রাণ রক্ষা হইবে না ভাবিয়া, অনেকেই ঘর বাড়ী ছাড়িয়া পলায়নের উদ্যোগ করিতেছে, স্ব স্ব জীবন রক্ষার উপায় ভাবিতেছে। পরস্পরের এই সকল কথা,— ‘ডাক-হাঁক’, প্রস্থানের লক্ষণ অনুমানে অনুভূত হইতেছে। বিনা যুদ্ধে, বিনা বাক্যব্যয়ে, গাজী রহমান মহা মহা বীরগণ ও সৈন্যগণসহ জয়নাল আবেদীনকে লইয়া সহস্র মুখে বিজয়ঘোষণা করিয়া দীন মোহাম্মদী নিশান উড়াইয়া, বিজয় ডঙ্কা বাজাইয়া সিংহদ্বার পার হইলেন।

 যেখানে সমাজ, সেইখানেই দল। যেখানে লোকের বসতি, সেইখানেই গোলযোগ—সেইখানেই পক্ষাপক্ষ; সঙ্গে সঙ্গে হিংসা, শত্রুতা, মিত্রতা, আত্মীয়তা, বাধ্যবাধকতা। যেমন এক হস্তে তালি বাজিবার কথা নহে, তেমনই দলাদলি না থাকিলেও কথা জন্মিবার কথা নহে। কথা জন্মিলেই পরিচয়, স্বপক্ষ বিপক্ষ সহজেই নির্ণয়। সে সময় খুঁজিতে হয় না —কে কোন্ পথে, কে কোন্ দলে।

 এজিদ দামেস্কের রাজা। প্রজামাত্রেই যে মহারাজগত প্রাণ—অন্তরের সহিত রাজানুগত—সকলেই যে তাঁহার হিতকারী—তাহা নহে, সকলেই যে তাঁহার দুঃখে দুঃখিত,—তাহাও নহে। দামেস্ক-সিংহাসন পরপদে দলিত হইল ভাবিয়া সকলেই যে দুঃখিত হইয়াছে, চক্ষের জল ফেলিয়াছে, সকলের হৃদয়ে যে আঘাত লাগিয়াছে, তাহাও নহে। অনেকে পূর্ব্ব হইতেই হজরত মাবিয়ার পক্ষীয়, প্রভু হাসান-হোসেনের ভক্ত রহিয়াছে। আজ পরিচয়ের