পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩২

 এজিদ বলিলেন, “সন্দিহান মনের সন্দেহ অনেক। সকলগুলি যে যথার্থ সন্দেহ, তাহা নহে। আমি সে জন্য ভাবিতেছি না। জয়নাবের বৈধব্যব্রত সমাধা হইতে এখনও অনেক বিলম্ব।”

 “সেই বা আর কত দিন? সময় যাইতেছে, ফিরিতেছে না, একভাবেও থাকিতেছে না। সময়ের গতির বিশ্রাম নাই, ক্লান্তি নাই, শ্রান্তি নাই। অবশ্যই যাইবে, অবশ্যই বৈধব্যব্রত সমাধা হইবে।”

 এজিদ সর্ব্বদাই চকিত। কোন প্রকার শব্দ কর্ণে প্রবেশ করিলেই এজিদের মন কাঁপিয়া উঠিত। কারণ আর কিছু নহে, মোস্‌লেমের আগমন সম্ভাবনা। এজিদ উঠিয়া বসিলেন। বোধ হয়, তাঁহার কর্ণে কোন প্রকারের শব্দ প্রবেশ করিয়াছিল, তাহা না হইলে উঠিয়া বসিবেন কেন? মারওয়ানের তত মনোযোগ নাই। এজিদ উঠিয়া দেখিলেন যে, তাঁহার মাতার প্রধান পরিচারিকা ত্রস্তে আসিতেছে। সে নিকটে আসিয়া বলিল, “শীঘ্র আসুন, মহারাজ আপনাকে মনে করিয়াছেন।”

 এজিদ যে বেশে বসিয়াছিলেন, সেই বেশেই পিতার নিকটে গমন করিলেন। মারওয়ানকে বলিয়া গেলেন, “তুমি একটু অপেক্ষা কর, আমি আসিতেছি।”—এই বলিয়া এজিদ চলিয়া গেলেন।

 মাবিয়া পীড়িত, শয্যায় শয়ন করিয়া আছেন। এজিদের মাতা পার্শ্বে নিম্নতর আর একটি শয্যায় বসিয়া বিষণ্ণ বদনে চাহিয়া আছেন। এজিদ সসম্ভ্রমে মাতার চরণ বন্দনা করিয়া নিকটেই বসিলেন। মাবিয়া মৃদুস্বরে বলিলেন, “মোস্‌লেম ফিরিয়া আসিয়াছে। (এজিদ চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন, কাহাকেও দেখিলেন না।) জয়নাবের বুদ্ধিকে আমি শত শত ধন্যবাদ দিই। এত অল্প বয়সে এত ধৈর্য্যগুণ কাহার? এমন ধর্ম্মপরায়ণ সতী-সাধ্বীর নাম আমি কখনই শুনি নাই। জয়নাবের প্রত্যেক কথায় মন গলিয়া যায়। ইচ্ছা হয় যে, ধর্ম্মবিষয়ে উপদেশ তাহার নিকট আমরাও শিক্ষা করি। ঈশ্বর তাহাকে যেমন সুশ্রী করিয়াছেন, তেমনি বুদ্ধিমতী করিয়া আরও দ্বিগুণ রূপ বাড়াইয়া দিয়াছেন। আহা! তাহার ধর্ম্মে মতি, ঈশ্বরের প্রতি অচলা ভক্তি এবং ধর্ম্মনীতির সুনীতি-কথা