পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৪

রাজ্য রক্ষা কর। আমি আর কয়দিন বাঁচিব? আমি যে প্রকারে এমাম হাসান-হোসেনের আনুগত্য ও দাসত্ব স্বীকার করিলাম, তুমি তাহার চতুর্গুণ করিবে। তোমা অপেক্ষা তাঁহারা সকল বিষয়েই বড়?”

 তখন এজিদের মুখে কথা ফুটিল, বাক্‌শক্তির জড়তা ঘুচিল। পিতৃবাক্যবিরোধী হইয়া বলিতে অগ্রসর হইলেন, “আমি দামেস্কের রাজপুত্র। আমার রাজকোষ সর্ব্বদা ধনে পরিপূর্ণ, সৈন্য-সামন্তে সর্ব্ববলে বলীয়ান্! আমার সুরম্য অত্যুচ্চ প্রাসাদ এদেশে অদ্বিতীয়। আমি সর্ব্ববিষয়ে পরিপূর্ণ ও অভাবশূন্য। আমি যাহার জন্য প্রাণ পর্যন্ত পরিত্যাগ করিতে প্রস্তুত, আমি যাহার জন্য রাজ্যসুখ তুচ্ছ করিয়া এই কিশোর বয়সে জীবন পর্য্যন্ত বিসর্জ্জন করিতে অগ্রগামী, যাহার জন্য এতদিন এত কষ্ট সহ্য করিলাম, সেই জয়নাবকে হাসান বিবাহ করিবে? এজিদের চক্ষে তাহা কখনই সহ্য হইবে না। এজিদের প্রাণ কখনই তাহা সহ্য করিতে পারিবে না। যে হোসেনের এক সন্ধ্যা আহারের সংস্থান নাই, উপবাস যাহাদের বংশের চিরপ্রথা, একটি প্রদীপ জ্বালিয়া রাত্রির অন্ধকার দূর করিতে যাহাদের প্রায় ক্ষমতা হয় না, সেই হোসেনকে এজিদ্ মান্য করিবে? মান্য করা দূরে থাকুক, জয়নাব-লাভের প্রতিশোধ এবং সমুচিত শাস্তি অবশ্যই এজিদ্ তাহাদিগকে দিবে। আমার মনে যে ব্যথা দিয়াছে, আমি তাহা অপেক্ষা শত সহস্রগুণে তাহাদের মনে ব্যথা দিব! এখনই হউক, বা দুদিন পরেই হউক, এজিদ্ বাঁচিয়া থাকিলে ইহার অন্যথা হইবে না; এই এজিদের প্রতিজ্ঞা।”

 মাবিয়া অতি কষ্টে শয্যা হইতে উঠিয়া সরোষে বলিতে লাগিলেন, “ওরে নরাধম! কি বলিলি? রে পাষণ্ড! কি কথা আজ মুখে উচ্চারণ করিলি? হায়! হায়!! নূরনবী মোহাম্মদের কথা আজ ফলিল! তাঁহার ভবিষ্যৎবাণী আজ সফল হইল। ওরে পাপাত্মা! তুই কিসের রাজা? তুই কোন্ রাজার পুত্র? তোর কিসের রাজ্য? তোর ধনাগার কোথায় রে বর্ব্বর? তুই তো আজই প্রধান জাহান্নামী (নারকী) হইলি! আমাকে সঙ্গী করিলি! রে দুরাত্মা পিশাচ! তোকে সে দিন কে বাচাঁইল? হায়! হায়!! আমি তোর এই পাপমুখ দেখিয়াই হাতের অস্ত্র হাতে রাখিয়াছিলাম। তাহার ফল হাতে হাতেই পাইলাম।