পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৯৪

 কানন-দ্বার পার হইয়া হানিফা এজিদের গুপ্তপুরী-প্রবেশদ্বার আবরণকারী লতাপাতা-বেষ্টিত নিকুঞ্জ প্রতি একবার চক্ষু ফিরাইয়া দেখিলেন: দুর্গন্ধময় ধুমরাশি হুহু করিয়া আকাশে উঠিতেছে, বাতাসে মিশিতেছে। রাজপুরী পশ্চাতে রাখিয়া তিনি দামেস্ক-নগরের পথে চলিলেন। যে তাঁহার সম্মুখে পড়িতে লাগিল, তাহারই জীবন শেষ হইল। বিনা অপরাধে হানিফার অস্ত্রে জীবনলীলা সাঙ্গ করিয়া খণ্ডিত দেহসকল ধূলায় গড়াগড়ি যাইতে লাগিল। জয়নালভক্ত প্রজাগণ এজিদের পরিণাম দশা দেখিতে আনন্দোৎসাহে রাজপুরীর দিকে দলে দলে আসিতেছিল। হানিফায় রোষাগ্নিতে পড়িয়া তাহারা এক পদও অগ্রসর হইতে পারিল না, আপন প্রতিপালক রক্ষকহস্তে প্রাণ বিসর্জ্জন করিতে লাগিল।

 নগরের প্রবেশদ্বারে প্রহরিগণ বসিয়াছিল। এজিদ সহ মোহাম্মদ হানিফা নগরে প্রবেশ করিলে, প্রহরিগণ মোহাম্মদ হানিফাকে দেখিয়াই সতর্কতা ও সাবধানতার সহিত কর্ত্তব্যকার্য্যে তৎপর হইল। নিকটে আসিতেই প্রহরিগণ মাথা নোয়াইয়া অভিবাদন করিল; কিন্তু মস্তক উত্তোলন করিয়া দ্বিতীয়বার সম্ভাষণের আর তাহাদের অবসর হইল না। প্রভুর অস্ত্রে প্রহরীদের মস্তক দেহ হইতে ভিন্ন হইয়া সিংহদ্বারে গড়াইয়া পড়িল। দৈনিক কার্য্য সমাধা করিয়া দীনহীন দরিদ্র ব্যক্তি সন্ধ্যাগমে নগরে আসিতেছে, পথিক পথশ্রমে ক্লান্ত হইয়া বিশ্রামহেতু লোকালয়ে আসিতেছে, ত্রস্তে পদবিক্ষেপ করিতেছে—কত কথাই তাহাদের মনে উঠিতেছে। চক্ষের পলকে সে সকল কথা ফুরাইয়া গেল, বিনামেঘে বজ্রাঘাত সদৃশ হানিফার অস্ত্রে তাহাদের জীবনলীলা পথিমধ্যেই সাঙ্গ হইল।

 গাজী রহ্‌মান, মস্হাব কাক্কা প্রভৃতি যথাসাধ্য ত্রস্তে আসিয়াও মোহাম্মদ হানিফাকে নগরে পাইলেন না। সিংহদ্বারে আসিয়া যাহা দেখিবার দেখিলেন। প্রান্তরে আসিয়া স্পষ্টতঃ দেখিতে পাইলেন, আম্বাজভূপতি যাহাকে সম্মুখে পাইতেছেন, বিনা বাক্যব্যয়ে তাহার জীবন শেষ করিয়া অগ্রসর হইতেছেন। এখনও ঘোর অন্ধকারে দামেস্ক প্রান্তর আবৃত হয় নাই।