পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

উপস্থিত সন্ধ্যাতেই তোমার জীবনের শেষ সন্ধ্যা হইতে তুমি মুক্তি পাইলে।” হোসেন এই বলিয়া কাসেদের নিকট হইতে ফিরিয়া আসিলেন। এদিকে সন্ধ্যাকালীন উপাসনার সময়ে আহ্বানসূচক সুমধুরধ্বনি (আজান) ঘোষিত হইল; সকলেই উপাসনা করিতে গমন করিলেন। কাসেদের প্রত্যাগমনের পূর্ব্বেই এজিদ সমরসজ্জায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। সৈন্যগণের পরিচ্ছদ, অস্ত্রশস্ত্রের পারিপাট্য, আহার্য্য দ্রব্যের সংগ্রহ, পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত, বহনোপযোগী বাহন ও বস্ত্রাবাস প্রভৃতি যাহা যাহা আবশ্যক, তৎসমস্তই প্রস্তুত করিয়াছেন। তিনি নিশ্চয়ই জানিয়াছিলেন যে, পত্র পাইয়া হাসান-হোসেন একেবারে জ্বলিয়া উঠিবে। এমন কি, কাসেদের প্রাণ লইয়া দামেস্কে ফিরিয়া আসা সন্দেহ বিবেচনা করিয়া তিনি গুপ্তচরও নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ভাবিয়াছিলেন নিশ্চয়ই যুদ্ধ হইবে, কেবলমাত্র সংবাদ-প্রাপ্তির অপেক্ষায় ছিলেন। এক দিন আপন সৈন্য-সামন্তগণকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া প্রথমতঃ অশ্বারোহী সৈন্যদিগের যুদ্ধকৌশল ও অস্ত্রচালনা দেখিয়া পরে পদাতিক সৈন্যের ব্যুহ-নির্মাণের নৈপুণ্য, আত্মরক্ষা করিয়া বিপক্ষের প্রতি অস্ত্র-চালনার সুকৌশল এবং সমর প্রাঙ্গণে পদচালনার চাতুর্য্য দেখিয়া এজিদ মহানন্দে বলিতে লাগিলেন, “আমার এই শিক্ষিত সৈন্যগণের অস্ত্রের সম্মুখে দাঁড়ায় এমন সুশিক্ষিত সাহসী সৈন্য কাহার আছে? ইহাদের নির্ম্মিত ব্যুহ ভেদ করিয়া যুদ্ধে জয়ী হওয়া কাহার সাধ্য? হাসান ত দূরের কথা, তাহাদের পিতা যে অত বড় যোদ্ধা ছিল, সেই আলীও যদি কবর হইতে উঠিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের সম্মুখীন হয়, তাহা হইলেও তাহার পরাজয় ভিন্ন জয়ের আশা নাই।”

 এজিদ এইরূপ আত্মগৌরব ও আত্মপ্রশংসায় মত্ত ছিলেন, এমন সময় মদিনা হইতে কাসেদ ফিরিয়া আসিয়া সমুচিত অভিবাদনপূর্ব্বক এজিদের হস্তে সেই ছিন্ন পত্রটি দিয়া, হোসেন যাহা বলিয়াছিলেন, অবিকল তাহা বলিল।

 এজিদ ক্রোধে অধীর হইয়া কিঞ্চিৎ উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন,—সৈন্যগণ! তোমরা আমার দক্ষিণ বাহু, তোমরাই আমার একমাত্র ভরসা। আমি তোমাদিগকে যথাযোগ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করিয়াছি। পূর্ব্ব হইতেই তোমাদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছি, যে যেমন উপযুক্ত, তাহাকে সেই প্রকার