পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৬০

তোমার কৃপায় তুচ্ছ জ্ঞান করি। কেবল তোমার নাম ভরসা করিয়াই দুর্গম শত্রুপথে পা বাড়াইয়াছি। তুমিই সহায়, তুমিই রক্ষাকর্ত্তা।” সকলেই “আমিন—আমিন” বলিয়া, পরে নূরনবী মোহাম্মদের গুণানুবাদ করিয়া একে অশ্বারোহণে রাজপথে অসিয়া উপস্থিত হইলেন। নগরবাসীরা ব্যগ্রতাসহকারে তাঁহাদের চারিদিকে দাঁড়াইয়া বলিতে লাগিলেন, “আমরা বাঁচিয়া থাকিতে আপনাকে শত্রুসম্মুখে যাইতে দিব না। অমরা এই চলিলাম, পৃষ্ঠে আঘাত লইয়া আর ফিরিব না। আঘাতিত দেহ আর মদিনাবাসীকে দেখাইব না। হয় মারিব, নয় মরিব!!”

 হাসান অশ্ব হইতে নামিয়া বলিলেন, “ভ্রাতৃগণ! ঈশ্বরের রাজ্যে বাস করিয়া ঈশ্বরের কার্য্যে জীবন শেষ করাই জীবের কর্ত্তব্য। লোকে আমাকে মদিনার রাজা বলে। কিন্তু ভ্রাতৃগণ! তোমরা তাহা কখনই কর্ণে স্থান দিও না। এ জগতে কেহ কাহারও রাজা নহে, সকলেই সেই মহারাজাধিরাজ সর্ব্বরাজাধিরাজ ওয়াহ্‌দাহুলা শরীকালাহু (একমেবাদ্বিতীয়ম্) দয়াময়ের রাজ্যের প্রজা। সকলেই সেই মহান রাজার সৃষ্ট, তাঁহার শক্তি মহান্‌, আমরা সেই রাজার প্রজা। সাধ্যানুসারে সেই সর্ব্বশক্তিমান অদ্বিতীয় মহারাজের ধর্ম্মরাজ রক্ষণাবেক্ষণ করাই আমাদের সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য এবং তাহাই আমাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। সেই ধর্ম্মরাজ্যের বিরোধী হইয়াও অনেক নরাধম অস্থায়ী রাজ্যে বাস করিতেছে। আজ তোমরা যে নরাধমের বিরুদ্ধে একাগ্রচিত্তে অগ্রসর হইয়াছ, তাহার ধনবল, সৈন্যবল এত অধিক যে, মনে ধারণ করিতেও শঙ্কা বোধ হয়। যদিও আমাদের অর্থ নাই, যুদ্ধের উপকরণ নাই, বাহ্য আড়ম্বর নাই, তথাপি আমদের একমাত্র ভরসা—সেই অদ্বিতীয় ভগবান। তাঁহার নামই আমাদের আশ্রয়। সেই নাম অবলম্বন করিয়াই তাঁহার ধর্ম্মরাজ্য রক্ষা করিব। ভ্রাতৃগণ! যে পাপাত্মার সৈন্যগণ এই পবিত্রভূমি— আমাদের জন্মভূমি আক্রমণ করিবার আশায় নগরের বাহিরে শিবির স্থাপন করিয়া রহিয়াছে, সেই বিধর্ম্মী এজিদ মদিনার খাজনা আমার নিকট চাহিয়া পাঠাইয়াছিলেন। আমি তাহার উত্তর দিই নাই; সেই আক্রোশে এবং