পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৭
মহরম পর্ব্ব-ত্রয়ােদশ প্রবাহ

 শেষ কথাটি শেষ করিতে না দিয়াই মায়মুনা কহিল, “শেষের কার্য্যটি না করিলে কোন কার্য্যই সিদ্ধ হইবে না। কথাটা আগে ভাল করিয়া বিবেচনা কর, তাহার পর যাহা বলিতে হয়—বলিও। যে রাজরাণী জয়নাব হইত, সেই-ই রাজরাণী,—আবার প্রথমেই সহস্র স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কার! সকলই সুখের জন্য। জগতে যদি চিরকাল দুঃখের বোঝা মাথায় করিয়া বহিতে হয়, তবে মনুষ্যকুলে জন্মলাতে কি ফল? এমন সুযোগ কি আর হইবে? এ সময় কি চিরকালই এমনি থাকিবে? সময়ে সুযোগ পাইলে হাতের ধন পায়ে ঠেলিতে নাই। তোমার ভাগ্যে আছে বলিয়াই জয়নাব তোমার সপত্নী হইয়াছে। এই সকল ঘটনা দেখিয়াও কি তুমি বুঝিতে পারিতেছ না? আমার কথা কয়টি বড় মূল্যবান। ইহার এক একটি করিয়া সফল করিতে না পারিলে পরিশ্রম, যত্ন সকলই বৃথা। এক একটি কার্য্যের এমনই ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যে, একের অভাবে অন্যটা সাধিত হইতে পারে না। এই পুরীমধ্যে তোমার কে আছে? বল ত, তোমাকে আপন বলিয়া কে আদর করে? তুমিই না বলিয়াছ, সকলই আছে, অথচ তাহার মাঝে কি যেন নাই, তাহা আমি মুখে বলিয়া বুঝাইতে পারি না। তোমার মনই তাহার প্রমাণ। আজ আমি আর বেশী কিছু বলিব না।”—এই বলিয়া মায়মুনা জাএদার নিকট হইতে বিদায় লইল।

 জাএদা মলিনমুখী হইয়া উঠিয়া গেলেন। যেখানে গেলেন, সেখানেও স্থির হইয়া বসিতে পারিলেন না। পুনরায় নিজ কক্ষে আসিয়া শয়ন করিলেন। এক দিকে রাজভোগের লোভ, অপর স্বামীর প্রণয়, এই দুইটি ক্রমে ক্রমে তুলনা করিতে লাগিলেন। যদি জাএদা হাসানের পত্নী না হইতেন, যদি জাএদা সপত্নীর ঈর্ষানলে দগ্ধীভূত না হইতেন, তবে কি আজ জাএদা বিবেচনা-তুলাদণ্ডের প্রতি নির্ভর করিয়া সম্পত্তি সুখ সমুদয়—এক দিকে, আর স্বামীর প্রণয়, প্রাণ—ভিন্ন দিকে ঝুলাইয়া পরিমাণ করিতে বসিতেন? কখনই নহে! কতবার তিনি পরিবর্ত্তন করিলেন, দুরাশা-পাষাণ ভাঙ্গিয়া তুলাদণ্ড মনোমত ঠিক করিয়া অসীম দুঃখ-ভার চাপাইয়া দিলেন, তথাপি স্বামীর প্রাণের দিকই বেশী ভারী হইল। কিন্তু জয়নাবের নাম