পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৮০

কষ্ট দিতে স্বামী-বধ করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। দেখ বোন্, আমাকে অকুলসাগরে ভাসাইও না। আমার সর্ব্বনাশ করিতে আমিই ত দাঁড়াইলাম, তাহাতে দুঃখ নাই। জয়নাবের সর্ব্বনাশ করিতে আমার সর্ব্বনাশ! এখন ইহাও সর্ব্বমঙ্গল, সর্ব্বসুখ মনে করিতেছি। কিন্তু বোন্, তুমি আমাকে নিরাশ্রয় করিয়া বিষাদ-সমুদ্রে ভাসাইও না।”

 ধীরে ধীরে এই কথাগুলি বলিয়া জাএদা বিদায় লইলেন। মায়মুনাও গৃহকার্যো ব্যাপৃতা হইল।

 জাএদা গৃহে আসিয়া কৌটা খুলিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার সর্ব্বশরীর শিহরিয়া উঠিল, ভয়ে হস্ত কাঁপিতে লাগিল; কিন্তু মায়মুনার উপদেশক্রমে সে ভয় বেশীক্ষণ রহিল না। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে সেই কৌটাটির বস্তু মিশাইবেন, ইহাই মায়মুনার উপদেশ। সে সময় তিনি আর কিছু পাইলেন না, একটা পাত্রে কিঞ্চিৎ মধু ছিল, তাহাতেই সেই বস্তুর কিঞ্চিৎ মাত্র মিশাইয়া রাখিলেন। কৌটাটিও অতি যত্নে সংগোপনে রাখিয়া দিলেন।

 হজরত হাসান প্রতিদিনই একবার জাএদার গৃহে আসিয়া দুই এক দণ্ড নানাপ্রকার আলাপ করিতেন। কয়েকদিন আসিবার সময় পান নাই; সেই দিন মহাব্যস্তে জাএদার ঘরে আসিয়া বসিলেন। জাএদা পূর্ব্বমত স্বামীর পদসেবা করিয়া ব্যস্তসমস্তে জলযোগের আয়োজন করিতে লাগিলেন।

 হাসান ভাবিয়াছিলেন, জাএদার ঘরে কয়েকদিন যাই নাই, না জানি, জাএদা আজ কতই অভিমান করিয়া রহিয়াছে! কিন্তু ব্যবহারে তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত দেখিলেন। জাএদা পূর্ব্বাপেক্ষা শতগুণে সরলতা শিখিয়াছে, মানসের পূর্ণানন্দে পরিপূরিত রহিয়াছে—এই ভাব দেখিয়া হাসান আজ জাএদার গৃহেই বাস করিবেন মনে মনে স্থির করিলেন। জাএদাও নানা প্রকার হাবভাব প্রদর্শনে স্বামীর মন হরণ করিয়া তাঁহার প্রাণ হরণ করিতে বসিলেন।

 ঈশ্বরভক্তই হউন, মহামহিম ধার্ম্মিক প্রবরই হউন, মহাবলশালী বীর-