বীরবলের হালখাতা من موا لا এ অবস্থায় শীতের পাশে বর্ষাই মানায় ভালো। শুনতে পাই, কোনো ইউরোপীয় দার্শনিক আবিষ্কার করেছেন যে, মানবসভ্যতার তিনটি স্তর আছে। প্ৰথম আসে শ্রুতির যুগ, তার পর দর্শনের, তার পর বিজ্ঞানের। এ কথা যদি সত্য হয় তো আমরা, বাঙালিরা, আর-যেখানেই থাকি, মধ্যযুগে নেই ; আমাদের বর্তমান-অবস্থা হয় সভ্যতার প্রথম-অবস্থা, নয় শেষা-অবস্থা। আমাদের এ যুগ যে দর্শনের যুগ নয়, তার প্রমাণ- আমরা চোখে কিছুই দেখি নে ; কিন্তু হয় সবই জানি, নয়। সবই শুনি । এ অবস্থায় প্রকৃতি যে আমাদের প্রতি অভিমান করে তার বাসন্তী-স্মৃতি লুকিয়ে ফেলবেন, তাতে আর আশ্চৰ্য কি । VK) আমি এইমাত্র বলেছি যে, এ যুগে আমরা হয় সব জানি, নয় সব শুনি। কিন্তু সত্য কথা এই যে, আমরা এ কালে যা-কিছু জানি সে-সব শুনেই জানি- অর্থাৎ দেখে কিংবা ঠেকে নয় ; তার কারণ, আমাদের কোনো-কিছু দেখবার আকাজক্ষা নেইআর সব-তাতেই ঠেকাবার আশঙ্কা আছে। এই বসন্তের কথাটাও আমাদের শোনা-কথা ও একটা গুজবমাত্র । বসন্তের সাক্ষাৎ আমরা কাব্যের পাকা-খাতার ভিতর পাই, গাছেক্স কচি-পাতার ভিতর নয় । আর বইয়ে যে বসন্তের বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়- তা কস্মিনকালেও এই ভূভারতে ছিল কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ করবার বৈধ কারণ আছে। গীতগোবিন্দে জয়দেব বসন্তের যে রূপবর্ণনা করেছেন, সে রূপ বাংলার কেউ কখনো দেখে নি। প্রথমত, মলয়সমীরণ যদি সোজাপথে সিধে বয়, তা হলে বাংলাদেশের পায়ের নীচে দিয়ে চলে যাবে, তার গায়ে লাগবে না । আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া যায় যে, সে যাতাস উদভ্ৰান্ত হয়ে অর্থাৎ পথ ভুলে বঙ্গভূমির গায়েই এসে ঢলে পড়ে, তা হলেও লবঙ্গলতাকে তা কখনোই পরিশীলিত করতে পারে না । তার কারণ, লবঙ্গ গাছে ফলে কি লতায় ঝোলে, তা আমাদের কারো জানা নেই। আর হোক-না সে লতা, তার এ দেশে দোদুল্যমান হবার কোনোই সম্ভাবনা নেই এবং ছিল না । সংস্কৃত আলংকারিকের ‘কাবেরীতীরে কালাগুরুতরু'র উল্লেখে ঘোরতর আপত্তি করেছেন, কেননা ও বাক্যটি যতই শ্রুতিমধুর হোকনা কেন- প্ৰকৃত নয়। কাবেরীতীরে যে কালাগুরুতরু কালেভদ্রে ও জন্মাতে পারে না, একথা জোর করে আমরা বলতে পারি নে; অপর পক্ষে, অজয়ের তীরে লবঙ্গলতার আবির্ভােব এবং প্রাদুর্ভাব যে একেবারেই অসম্ভব, সে কথা বঙ্গভূমির বীরভূমির সঙ্গে
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৮
অবয়ব