পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ 心》、 চলে গেছে। পুৱাকালে মানুযে যা-কিছু গড়ে গেছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সমাজ হতে আলগা করা, দু-চার জনকে বহুলোক হতে বিচ্ছিন্ন করা । অপর পক্ষে নবযুগের ধর্ম হচ্ছে- মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন করা, সমগ্ৰ সমাজকে ভ্ৰাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করা, কাউকেও ছাড়া নয়, কাউকেও ছাড়তে দেওয়া নয়। এ পৃথিবীতে বৃহৎ না হলে যে কোনো জিনিস মহৎ হয় না, এরূপ ধারণা আমাদের নেই ; সুতরাং প্ৰাচীন সাহিত্যের কীর্তির তুলনায় নবীন সাহিত্যের কীর্তিগুলি আকারে ছোটো হয়ে । আসবে, কিন্তু প্রকারে বেড়ে যাবে ; আকাশ আক্রমণ না করে মাটির উপর অধিকার বিস্তার করবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কাব্যদর্শনাদি আর গাছের মতো উঁচুর দিকে ঠেলে উঠবে। না, ঘাসের মতো চারিদিকে চারিয়ে যাবে। এক কথায় বহুশক্তিশালী স্বল্পসংখ্যক লেখকের দিন চলে গিয়ে স্বল্পশক্তিশালী বহুসংখ্যক লেখকের দিন আসছে। আমাদের মনোজগতে যে নব্বসূৰ্য উদয়োম্মুখ, তার সহস্র রশ্মি অবলম্বন করে অন্তত ষষ্টি সহস্ৰ বালখিল্য-লেখক এই ভূভারতে অবতীর্ণ হবেন। এরূপ হবার কারণও সুস্পষ্ট। আজকাল আমাদের ভাববার সময় নেই, ভাববার অবসর থাকলেও লেখবার যথেষ্ট সময় নেই, লেখবার অবসর থাকলেও লিখতে শেখবার অবসর নেই; অথচ আমাদের লিখতেই হবে, নচেৎ মাসিকপত্র চলে না। এ যুগের লেখকরা যেহেতু গ্ৰন্থকার নন, শুধু মাসিকপত্রের পৃষ্ঠপোষক, তখন তাদের : ঘোড়ায় চড়ে লিখতে না হলেও ঘড়ির উপর লিখতে হয় ; কেননা, মাসিকপত্রের প্রধান । কর্তব্য হচ্ছে পয়ল বেরনো ; কি যে বেরলে, তাতে বেশি-কিছু আসে-যায় না। তা ছাড়া, আমাদের সকলকেই সকল বিষয়ে লিখতে হয়। নীতির জুতো সেলাই থেকে ধর্মের চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সকল ব্যাপারই আমাদের সমান অধিকারভুক্ত। আমাদের নবসাহিত্যে কোনোরূপ ‘শ্রমবিভাগ’ নেই, তার কারণ যে ক্ষেত্রে ‘শ্রম’-নামক মূল পদার্থেরই অভাব সেস্থলে তার বিভাগ আর কী করে হতে পারে। । তাই আমাদের হাতে জন্মলাভ করে শুধু ছোটোগল্প খণ্ডকাব্য সরলবিজ্ঞান ও डब्रुलभं ।

  • দেশকলপাত্রের সমবায়ে সাহিত্য যে ক্ষুদ্রধর্মাবলম্বী হয়ে উঠেছে, তার জন্য আমার কোনো খেদ নেই। একালের রচনা ক্ষুদ্র বলে আমি দুঃখ করি নে, আমার দুঃখ যে তা যথেষ্ট ক্ষুদ্র নয়। একে স্বল্পায়তন, তার উপর লেখাটি যদি ফাপা হয়, তা হলে সে জিনিসের আদর করা শক্ত। বালা গালভরা হলেও চলে, কিন্তু আংটি নিরেট হওয়া চাই। লেখকরা এই সত্যটি মনে রাখলে গল্প স্বল্প হয়ে আসবে, শোক শ্লোকরূপ ধারণ করবে, বিজ্ঞান বামনরূপ ধারণ করেও ত্রিলোক অধিকার করে থাকবে এবং দর্শন নখদর্পণে পরিণত হবে। যারা মানসিক আরামের চর্চা না করে ব্যায়ামের চর্চা