পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

মাছরাঙা সাড়া দিলে—“জিরোও-জিরোও।” আস্তে-আস্তে হাঁসের দল ঝরনার স্রোতে পিছল পাথরগুলোর উপর একে-একে উড়ে বসল। এমনি জায়গায়-জায়গায় জিরিয়ে-জিরিয়ে চলতে-চলতে সন্ধ্যা হয়ে এল, নিচের অন্ধকার পাহাড়ের চূড়োর দিকে আস্তে-আস্তে উঠতে আরম্ভ করলে, মনে হচ্ছে কে যেন বেগুনী কম্বলে ঘেরাটোপ দিয়ে একটার পর একটা পর্বত মুড়ে রাখছে, দেখতে-দেখতে আকাশ কালো হয়ে গেল, তারি মাঝে গোলাপী এক-টুকরো ধোঁয়ার মতো দূরের বরফের চুড়ো রাত্রের রঙের সঙ্গে ক্রমে মিলিয়ে গেল।

 পাহাড়ের গলিতে অন্ধকার যে কি ভয়ানক কালো, রিদয় আজ টের পেলে, নিজেকে নিজে দেখা যায় না, কোনদিক উপর কোনদিক নিচে চেনা যায় না। কিন্তু এই অন্ধকারেও ঘাঁটিতে-ঘাঁটিতে রাতের পাখিরা পাহারা দিচ্ছে। এ পাহাড়ে এক পাখি হাঁকলে—“হুহু বাতাস হুহু,” ও পাহাড়ের পাখি তারি প্রতিধ্বনি দিয়ে বলে উঠল—“ঘুটঘুট আঁধার ঘুটঘুট।” দুই পাখি থামল, আবার খানিক পরে দুই পাখি আরম্ভ করলে-“জল পিটপিট তারা মিটমিট।” বোঝা গেল এখনো বিষ্টি পড়ছে, দু-একটি তারা কেবল দেখা দিয়েছে। ভালুক-ভালুকী ঝরণার পথে জল খেতে নেমেছে, তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছে না, কেবল বলাবলি করছে শোনা যাচ্ছে—“সেঁৎ-সেঁৎ।” একটা হরিণ কিম্বা কি বোঝা গেল না হঠাৎ বলে উঠল—“পিছল।” তারপরেই পাহাড়ের গা দিয়ে একরাশ নুড়ি গড়িয়ে পড়ল।

 রাতে যে এত জানোয়ার চারদিকে ঘোরাঘুরি হাঁকাহাঁকি করে বেড়ায়, তা রিদয়ের জ্ঞান ছিল না। আঁধারের মধ্যে কত কি উসখুস করছে, খুসখাস করছে, চলছে, বলছে—কত সুরে কত রকম গলায় তার ঠিক নেই। রিদয়ের মনে হল বাতাসটা পর্যন্ত যেন বনের সঙ্গে ফুসফাস করে এক-একবার বলাবলি করে যাচ্ছে। তখন রাত গভীর ঝিঁঝিঁ পোকা বলে চলেছে ঝিম-

১০৮