বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হাঁকতে-হাঁকতে—“মড়াখেকো-কুকুর কোথাকার! ছাড় বলছি, না হলে মজা দেখাব।”

 চাঁদপুরের খেঁকশেয়াল যার নাম, আসামের জঙ্গলে হেন পাখি নেই যে তাকে জানে না। সে শহরে গিয়ে কতবার মুরগি, হাঁস ধরে এনেছে। ‘তাকে মড়াখেকো-কুকুর’ বলে এমন সাহস কার? শেয়াল একটু থেমে যেমন ঘাড় ফিরিয়ে দেখেছে, অমনি রিদয় গিয়ে তার ল্যাজ চেপে পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলে। মানুষটি বুড়ো-আংলা, তার কিলটি কত বড়ই বা? শেয়ালের পিঠে একটা যেন বেদানা-বিচি পড়ল! কিন্তু মানুষের মতো গলার স্বর শুনে শেয়াল সত্যি ভয় পেলে; সে ল্যাজ তুলে বনের মধ্য দিয়ে পালিয়ে চলল; আর রিদয় তার ল্যাজ ধরে টিকটিকির মতো ঝুলতে-ঝুলতে চলল—উলু-ঘাসের মধ্যে দিয়ে গা-ঘেঁষড়ে। কাঁকড়ার মতো ল্যাজে কি কামড়ে রয়েছে, সেটা দেখবার শেয়ালের অবসর ছিল না, সে একেবারে নিজের গর্তর কাছে এসে দাড়িয়ে, মুখ থেকে হাঁসটা নামিয়ে, সেটার বুকে পা দিয়ে দাড়াল, তখন তার চোখ পড়ল ল্যাজে-গাঁথা বুড়ো-আংলার দিকে! এই টিকটিকির মতো ছেলেটা-ইনি চাঁদপুরী শেয়ালকে জব্দ করবেন, ভেবে শেয়াল ফ্যাক করে মুখ-ভেংচে হেসে বলল—“এইবার তোমার মনিবকে খবর দাওগে চাঁদপুরের শেয়াল হাঁস খেয়েছে।”

 ছুঁচোলো-মুখ, নাটা-চোখ দেখে এতক্ষণে রিদয় বুঝলে এটা শেয়াল। কিন্তু শেয়াল তাকে ভেংচেছে, এর শোধ সে দেবেই-দেবে! রিদয় আরো শক্ত করে তার ল্যাজ চেপে, দুই পায়ে একটা গাছ আঁকড়ে, যেমন শেয়াল হাঁ করে হাঁসটার গলা কাটতে গেছে অমনি পিছনে এক টান দিয়ে, হাঁস থেকে শেয়ালকে দু-হাত তফাতে টেনে নিয়েছে! আর সেই ফাঁকে লুসাই হাঁসও ভাঙা ডানা ঝাপটাতে-ঝাপটাতে উড়ে পালিয়েছে।

 “হাঁস যাক, আজ তোকে খাব!”—বলে থেঁকশেয়ালী দাঁত-খিচিয়ে
৫০