চাইছে, এমন সময় ঘরের কোণে মস্ত দুটো মরচে-পড়া তালা-আঁটা সুঁদ্রি কাঠের উপরে পিতলের পাৎ আর পেরেকের নক্সা-কাটা বহুকালের সিন্দুকটার দিকে তার নজর পড়ল। যে কুলুঙ্গিতে ইঁদুরে-চড়া লাল-মাটির গণেশ ছোট ঢোলক বাজাচ্ছেন, ঠিক তারি নিচে, ঘরের একদিকের দেয়াল জুড়ে সিন্দুকটা রয়েছে। এতবড় যে মনে হচ্ছে যেন একটা রত্নবেদী!
এই সিন্দুকে কি যে আছে, তা রিদয় এ পর্যন্ত দেখেনি; কিন্তু সে জানে তার ঠাকুরদাদা, তার দাদা, তার দাদা, তার আবার দাদার দাদা—এমনি কত পুরুষের বাসন, গয়না আর যা-কিছু ভালো দামী আশ্চর্য সামগ্রী এই সিন্দুকটায় জমা আছে। লক্ষ্মীপুজোর দিন রিদয়ের মা এই সিন্দুককে সিঁদুরের ফোঁটা, ধানের শীষ দিয়ে সাজিয়ে পুজো করে, ঢিপঢিপ প্রণাম করে কতবার রিদয়কে বলেছেন—“দেখিস, সিন্দুকে পা ঠেকাসনে, ওতে লক্ষ্মী আছেন।”
সিন্দুকটা রিদয়ের বাপ-মা এক-একদিন ভাদ্দর মাসে ঠেলাঠেলি করে খুলে, তার থেকে ভারি-ভারি রূপোর গয়না, বেনারসী শাড়ি, কাঁসার বাসন বার করে, ঝেড়ে-পুঁছে যেখানকার যা গুছিয়ে রাখতেন; কিন্তু সিন্দুকের মধ্যেটায় যে কি, রিদয় এ পর্যন্ত একদিনও দেখতে পেলে না। সে দু’পায়ের বুড়ো-আঙুলে ভর দিয়ে খুব চেষ্টা করে মরচে-ধরা তালা দুটোর ফুটোয় চোখ দিতে পারত; তার উপর তার মাথা উঠত না। তালার ফুটোর মধ্যে অন্ধকারে একটা-কি চকচক করছে দেখা যায়, কিন্তু সেটাকে আঙুল দিয়ে টেনে বার করবার অনেক চেষ্টা করেও রিদয় পেরে ওঠেনি। তালা-দুটোকে যদি ভেঙে ফেলা যেত, তবে তালার মধ্যের জিনিস, সেই সঙ্গে সিন্দুকের মধ্যেটাও সে দেখে নিতে পারত। তালাটা কি করে ভাঙা যায় ভাবতে-ভাবতে রিদয়ের হাই উঠতে লাগল, আর চোখও ঢুলে এল।
সেই সময় কুলুঙ্গি থেকে গণেশের ইঁদুরটা জ্যান্ত হয়ে ঝুপ করে সিন্দুকের