বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুদ্ধের জীবন ও বাণী

 বোধিসত্ত্বের এই নির্ব্বাণ সাধনা উচ্ছেদ মূলক নহে, তিনি এক দিকে আপনার ভোগ বাসনা সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন করিয়া যেমন স্বার্থমূলক অহংকে সঙ্কুচিত করেন, অপর দিকে করুণায় বিগলিত হইয়া, মৈত্রী ভাবনা দ্বারা আপনাকে লোক লোকান্তরে ব্যাপ্ত করিয়া দিয়া থাকেন। তিনি ধ্যানপরায়ণ হইয়াও করুণ-হৃদয়, বিনয়ী ও সহিষ্ণু। তাঁহার সকল কর্ম্ম, সকল চেষ্টা এবং সকল ধ্যানের মূলে জীবের প্রতি অপ্রমেয় সহানুভূতি বিদ্যমান রহিয়াছে। অবশ্য ব্রতগ্রহণ করিবামাত্রই বোধিসত্ত্ব সর্ব্বপাপ হইতে মুক্তি লাভ করিয়া থাকেন কেহ যেন ভ্রমেও এমন কথা মনে না করেন। পাপ প্রলোভনের হস্ত হইতে উদ্ধার লাভের নিমিত্ত তাঁহাকে শীল গ্রহণ করিতে হয় সত্য, কিন্তু তিনি জানেন যে পরার্থে আপনাকে সর্ব্বতোভাবে অর্পণ করিবার জন্যই তিনি শীল গ্রহণ করিলেন। জীবের প্রতি করুণা রক্ষা করিবার নিমিত্ত তিনি অসীম ক্ষান্তিকে তাঁহার চিত্তের ভূষণ করিয়া লইয়াছেন। কোন দুর্ব্বিনীত নিষ্ঠুর ব্যক্তি তাঁহাকে আঘাত করিলেও তিনি ক্রুদ্ধ হইবেন না; মনে করিবেন, আমি যখন দেহধারী জীব তখন আমাকে দৈহিক উৎপীড়ন সহিতেই হইবে। আঘাতকারী ব্যক্তি আমার শত্রু নহে, বুদ্ধগণেরই ন্যায় পরম মিত্র; আঘাত করিয়া সে আমাকে সহিষ্ণুতা ও ক্ষমাশীলতা শিক্ষা করিবার সুযোগ প্রদান করিয়াছে; নিষ্পাপ হইবার নিমিত্ত আমাকে এই গুণ দুইটির অধিকারী হইতে হইবে। যাহারা আমার সহিত শক্রতাচরণ করে তাহাদের প্রতি ক্রুদ্ধ না হইয়া আমি তাহাদিগকে কৃপা করিব। বুদ্ধগণ যেমন অবিচলিত চিত্তে মুক্তির চিন্তা করিয়াছেন আমিও তাঁহাই করিব।

১৩২