পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তাহার পরিকরবর্গ SS আপনার অনেক মুসলমান মন্ত্রী আছেন, তঁহাদের কাহাকেও লইয়া ফাউন ৷” হুসেন সাহ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন, কিন্তু কিছু বলিলেন না। এদিকে সনাতনও রাজসভার কাজ প্রায়ই উপেক্ষা করেন, এবং সভায় উপস্থিত হন না। সম্রাট রাজবৈদ্য পাঠাইয়া জানিতে চাহিলেন, সত্যসত্য সনাতনের কোন অসুখ হইয়াছে কি না । ভিষক জানাইলেন, সনাতন দিব্য সুস্থ দেহে আছেন । হুসেন তঁহার প্রধান মন্ত্রী সনাতনকে এবার কারাগারে পাঠাইয়া শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য গৌড় ছাড়িয চলিয়া গেলেন। ৭০০০২ টাকা ঘুষ দিয়া সনাতনের আত্মীয়েরা কারাধ্যক্ষ মীব। হাবুলের নিকট হইতে সনাতনের মুক্তিলাভ করাইলেন । বন্দীরা গঙ্গায় স্নানার্থ মাঝে মাঝে নীত হইতেন । সেই সুযোগে সনাতন পলাইলেন, তাহার জন্য নৌকা প্ৰতীক্ষা করিতেছিল। এদিকে মীর হাবুলিও খুব সতর্ক অনুসন্ধানের একটা বাহাড়ম্বর করিযী কিছুতেই তঁহাকে খুজিয়া পাইলেন না। ঈশান নামক একটি ভূত্যের সঙ্গে সনাতন সন্ন্যাসীর বেশে গৌড ছাড়িয়া পলাইলেন। ঈশান গোপনে ১৫টি স্বর্ণমুদ্র সঙ্গে লইয়াছিল। গঙ্গা পার হইযা সনাতন পাত্ৰ নামক একটি ছোট পাহাডের নিকট এক পল্লীতে জনৈক “ভূইয়ার” বাড়ীতে আতিথ্য গ্ৰহণ করিলেন। এই ভূইয়ার অতিরিক্ত আপ্যায়ন ও ভদ্রতায় সনাতনের মনে সন্দেহ হইল। তিনি ঈশানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহাব সঙ্গে কোন অর্থ আছে কিনা। ঈশান সেই ১৫টি মোহব তাহার হাতে দিল। তিনি উহা ভূইয়াকে দিলেন। ভূইয়া অকপটে বলিল, “ইহা দিয়া ভালই করিয়াছেন, নতুবা আজ রাত্ৰেই আমরা আপনাদিগকে হত্যা করিতাম।” দয়ার শিরোমণি ভূইয়া ঐ অর্থ হইতে একটি মোহর পথখরচের জন্য সনাতনকে ফিরাইয়া দিল । সনাতন উহা ঈশানকে দিয তা স্থাকে বাড়ীতে ফিরিয়া যাইতে বাধা করিলেন । সমগ্র বাঙ্গলা রাজ্যোব প্ৰধান মন্ত্রী কৌপীন পরিয়া একক চুটিয়াছেন। পথে এক ময়দানে তিনি কতকগুলি মাটিব ডেলা দিয়া শিয়বোপ বালিশ ও পাশবালিশ প্ৰস্তুত করিয়া শুইয়াছিলেন। জলেব ঘাটের যাত্রী কোন মহিলা তাহাক দেখিয়া ঠাট্টা করিয়া বলিয়াছিল, “সন্ন্যাসী হইয়াছেন, কিন্তু ভোগের অভ্যাস যায় নাই।” সনাতন বুঝিলেন, বহুদিনের আভাস হইতে মুক্ত হওয়া অতি কঠিন । তিনি সেই মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়া চলিলেন । হাজিপুরে একটা খড়ের গাদার নীচে শীতের বাত্রে তিনি উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম কীৰ্ত্তন করিতেছিলেন। পার্শ্ববৰ্ত্তী একটা বড় বাড়ী সনাতনের ভগ্নীপতি শ্ৰীকণ্ঠ ভাড়া লইয়াছিলেন । হুসেন সাহ তাহাকে সেখান হইতে ঘোড়া কিনিবাব জন্য তিন লক্ষ টাকা দিয়া পাঠাইয়াছিলেন । শ্ৰীকণ্ঠ সনাতনের চিরপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনিধা চমৎকৃত হইলেন, তিনি তাড়াতাডি যাইয়া সনাতনেব সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন । দেখিলেন গৌড় রাজ্যোিব সামন্ত রাজারা যাহাৰ নিত্য দ্বাবস্থ থাকিতেন, সেই রাজচক্ৰবৰ্ত্তিসদৃশ মহামন্ত্রীর কটিতে কৌপীন-বাস । পৌষমাসের শীতে র্তাহাব ক্ষীণদেহ কঁাপিতেছে-নগ্নদেহ, অপচ মুখখানি প্ৰেমসরোবরের শতদলেব মত আনন্দে ঢলঢল । শ্ৰীকণ্ঠ তাহাকে ফিরাইতে বহু চেষ্টা করিলেন, পাশে বসিয়া কঁদিতে লাগিলেন । অবশেষে সেই দারুণ শীত নিবারণের জন্য শালদোশালা দিতে চাহিলেন, কিন্তু কুসুম হইতেও মৃদু এবং বাজ হইতেও কঠোব এই লোকোত্তরগণের চরিত্র