পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8R বৃহৎ বঙ্গ আকাশম্পর্শী মন্দির রচনা করিয়াছিলেন, সেই সনাতন এবং তঁহার ভারত প্ৰসিদ্ধ ভ্ৰাতা রূপ গোস্বামী চৈতন্যের তিরোধান শুনিয়া তাহার সর্বজনবন্দিত চরণ ধ্যান করিয়া ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। ১৫৩৩ খৃঃ অব্দের পর গৌড়ীয় বৈষ্ণব-সমাজের কাজ প্ৰায় অৰ্দ্ধশতাব্দী বন্ধ ছিল। মহাশোকে মতিচ্ছন্ন চৈতন্তের অনুচরগণ যেন বজ্ৰাঘাতে চেষ্টাহীন ও নীরব হইয়াছিলেন-কিন্তু অৰ্দ্ধশতাব্দী পরে আবার ধীরে ধীরে নবজীবনের আলোকচ্ছটায় দিশ্বলয় উজ্জল হইয়া উঠিল। চৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত-এই তিনজন প্ৰথম অধ্যায়ের নেতা ছিলেন। পরবর্তী যুগে শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শুষ্ঠামানন্দ এই তিনজন নেতৃত্ব গ্ৰহণ করিলেন। আবার তেমন করিয়া খোল বাজিয়া উঠিল-যেমন করিয়া চৈতন্যের সময়ে বাজিত, আবার সঙ্কীর্তনের উচ্চর্যোলে, রামসিঙ্গার চীৎকারে ভক্তিধৰ্ম্ম শুধু বঙ্গ-উডিম্বায় নহে, মথুরা, বৃন্দাবন ও রাজপুতনায় বিজয়ী হইল। বাঙ্গালী কবির বাঙ্গলা-ভাষা কতক পরিমাণে ত্যাগ করিয়া ব্ৰজবুলীতে পদ রচনা করিতে লাগিলেন, কারণ র্তাহাদের অপূৰ্ব্বপদগুলি এখন আর শুধু বাঙ্গালীর জন্য নহে-সমস্ত আৰ্য্যাবর্তে তাহা গীত হইবে । চিরঞ্জীব সেনের পুত্র, দামোদরের দৌহিত্র বুধবী-গ্ৰামবাসী সুপ্ৰসিদ্ধ গোবিন্দদাস প্রভৃতি কবিরা বিদ্যাপতির অনুসরণ করিয়া এই ব্ৰজবুলি ছন্দে যে রস বিলাইয়া দিলেন, তাহা বৃন্দাবনবাসীরা পৰ্য্যন্ত উপভোগ করিতে সমর্থ হইলেন। বাঙ্গালী কবির পদ সমস্ত আৰ্য্যাবর্তে প্ৰচারিত হইল। নরহরি চক্ৰবৰ্ত্তীর ভক্তিরত্নাকরে জীব গোস্বামী ও গোবিন্দদাসের যে সকল সংস্কৃত-পত্ৰ উদ্ধৃত আছে, তাহাতে দেখা যায় বাঙ্গালী কবিরা ব্ৰজবুলি ছন্দ অবলম্বন করিয়া কিভাবে সমস্ত আৰ্য্যাবর্ত বিজয় করিয়াছিলেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণব-ধৰ্ম্মের পর পর তিনটি কেন্দ্ৰ হইয়াছিল। প্ৰথম কেন্দ্ৰ নবদ্বীপে, যেখানে সৰ্ব্বপ্ৰথম বাসুদেব ঘোষের দুই ভ্ৰাতার হাতে খোল বাজিত এবং মুকুন্দ ও শ্ৰীবাস মধুর কণ্ঠে হরিনাম গাইতেন আর বক্রেশ্বর তঁাহার স্বৰ্গীয় নৃত্যে দর্শকদিগকে মুগ্ধ করিতেন। এই কেন্দ্রের মধ্যবৰ্ত্তী ছিলেন চৈতন্য । চৈতন্য পুরীতে গেলে নবদ্বীপ হতশ্ৰী হইল। এবার খোল বাজিয়া উঠিল। পুরীতে। বর্ষাকালে বাঙ্গালী ভক্তেরা শিবানন্দ সেনের নেতৃত্বে পুরীতে চলিয়া আসিতেন, তখন শ্ৰীবাসের কণ্ঠের স্বরলহরী ফিরিয়া আসিত ; মুকুন্দ আবার গাইতেন-বক্ৰেশ্বরের নৃত্যে, নিত্যানন্দসমাগমে, স্বরূপ-দামোদর, রামরায় এবং বাজাধিরাজ প্ৰতাপরুদ্রের প্ৰেমোচ্ছাসে ভক্ত জনসাধারণ নীলাদ্রিনাথের পথ ভুলিয়া বাঙ্গালী ভগবানের কীৰ্ত্তনে যোগ দিতেন। মহাপ্রভুর লীলাবসানের সঙ্গে সঙ্গে এই কেন্দ্ৰ নিম্প্রভ হইয়া গেল । তৃতীয় কেন্দ্ৰ-বৃন্দাবন। মহাপ্রভুর লীলাবসানেব পর বৃন্দাবন কতকদিন শোকে সমাচ্ছন্ন ছিল। এখানে শুধু ভক্তি ও প্রেমের চর্চা হয় নাই, অশেষ দৈন্য-ব্রহ্মচর্ঘ্যের অশেষ কঠোরতা, ও দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতদিগের অশেষ পাণ্ডিত্য-এই কেন্দ্রের বৈশিষ্ট্য হইয়া ইহাকে শ্ৰীসম্পন্ন করিয়াছিল। এখানে সনাতনের হরিভক্তিবিলাস, রূপের ললিতমাধব, বিদগ্ধমাধব, উজ্জল-নীলমণি, দানকোলী-কৌমুদী প্ৰভৃতি প্ৰসিদ্ধ গ্ৰন্থ সংস্কৃত ভাষায় লিখিত অৰ্ধশতাব্দী পারে। डिनbि cकट ।